প্রযুক্তি

রাশিয়া হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধের চেষ্টা করছে, জানা গেল আসল কারণ

বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ব্যবহারকারীর প্রিয় মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের উপর রাশিয়া সরকারের কঠোর অবস্থান নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দেশটির ডিজিটাল প্রযুক্তি নীতির সঙ্গে যুক্ত সমস্যার কারণে হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করার চেষ্টা করছে মস্কো। তবে মেটা প্ল্যাটফর্মসের মালিকানাধীন এই অ্যাপ রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

রাশিয়ার ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ: পেছনের গল্প

বেশ কয়েক বছর ধরে রাশিয়া ইন্টারনেট ব্যবস্থায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। দেশটি বিদেশি প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশেষ করে কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ ও ডেটা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে রাশিয়ার আপত্তি স্পষ্ট।

২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে সেনা প্রেরণের পর বিদেশি মেসেজিং অ্যাপ যেমন হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব আরও বৃদ্ধি পায়। সরকারি পক্ষ থেকে অভিযোগ আনা হয়েছে, এই অ্যাপগুলো রাশিয়ার আইন এবং নিরাপত্তা নির্দেশনা অমান্য করছে।

হোয়াটসঅ্যাপের অবস্থান

হোয়াটসঅ্যাপ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমাদের লক্ষ্য সাধারণ জনগণের নিরাপদ ও গোপন যোগাযোগ নিশ্চিত করা। ব্যক্তিগত, এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড যোগাযোগের অধিকার রক্ষার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাশিয়া আমাদের ১০ কোটিরও বেশি রুশ নাগরিকের কাছে অ্যাপটি বন্ধ করার চেষ্টা করছে, যা আমরা গ্রহণ করি না।”

হোয়াটসঅ্যাপ স্পষ্ট করেছে, তারা রাশিয়ায় তাদের পরিষেবা চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে রাশিয়ার উদ্যোগ ও আইন অনুযায়ী তাদের কার্যক্রমে কিছু সীমাবদ্ধতা এড়ানো যাবে না।

টেলিগ্রামের সমস্যা এবং এআই পর্যবেক্ষণ

রাশিয়ায় হোয়াটসঅ্যাপের মতো টেলিগ্রামেরও বিরোধ হয়েছে। টেলিগ্রাম জানিয়েছে, তারা প্রতিদিন লক্ষাধিক ক্ষতিকর বার্তা মুছে ফেলার জন্য এআই টুল ব্যবহার করছে। তবে রাশিয়ার মন্ত্রণালয় মনে করছে, এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয় এবং তারা বারবার আইন মেনে চলার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

রাশিয়ার ডিজিটাল উন্নয়ন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের প্রয়োজন অবৈধ কর্মকাণ্ড যেমন প্রতারণা, সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা। শুধুমাত্র কল পরিষেবার ক্ষেত্রে ব্লক প্রযোজ্য হবে। যদি হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম রুশ আইন মেনে চলে, তবে ব্লক তুলে নেওয়া হবে।

রাষ্ট্র-সমর্থিত মেসেজিং অ্যাপ: রাশিয়ার পরিকল্পনা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরকারি সেবার সঙ্গে একীভূত একটি রাষ্ট্র-সমর্থিত মেসেজিং অ্যাপ তৈরির অনুমোদন দিয়েছেন। ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে মস্কো নিজস্ব প্ল্যাটফর্মকে উৎসাহিত করছে। রাশিয়ার সরকার চাইছে, দেশটি বিদেশি সেবার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজেদের প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহারযোগ্য ও নিরাপদ করে তুলবে।

ব্যবহারকারীদের প্রভাব

রাশিয়ায় হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা ইতিমধ্যেই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। অনেক ব্যবহারকারী জানাচ্ছেন, যোগাযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে এবং তারা বিকল্প অ্যাপ খুঁজছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি রাশিয়ার ডিজিটাল কৌশলের অংশ যা জনগণকে স্থানীয় মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের দিকে পরিচালিত করবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

রাশিয়ার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি কমিউনিটির মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ডিজিটাল স্বাধীনতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামকে চাপের মধ্যে ফেলা মানে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ও নিরাপদ যোগাযোগের অধিকার সীমাবদ্ধ করা।

বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, রাশিয়ার কৌশল বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও উদাহরণ হিসেবে প্রভাবিত করতে পারে। অনেক দেশে ডিজিটাল সার্বভৌমত্বের নীতি ইতিমধ্যেই আলোচনার বিষয়।

রাশিয়ার এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগের দুনিয়ায় নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো অ্যাপের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নজর রাখছে।

রাশিয়ার ব্লক এবং রাষ্ট্র-সমর্থিত মেসেজিং অ্যাপ ডিজিটাল সার্বভৌমত্বের উদাহরণ হিসেবে পরিচিত হতে পারে। তবে সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য এটি নতুন চ্যালেঞ্জ ও বিকল্প খোঁজার প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়েছে।

MAH – 12322 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button