
বাংলাদেশ সীমান্তে অবৈধ চোরাচালানের বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বিজিবির বিশেষ অভিযানে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় ১৭৪ কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ ও চোরাচালানকৃত পণ্যসামগ্রী জব্দ করা হয়েছে। এই অভিযান দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বিজিবির অভিযানের বিস্তারিত
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে সীমান্তসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ পণ্য জব্দ করা হয়। জব্দকৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে প্রায় ৯ কেজি স্বর্ণ, ১৯ কেজি রুপা, হাজার হাজার পোশাক ও কাপড়ের পাশাপাশি লক্ষাধিক কসমেটিকস সামগ্রী, আতশবাজি, কাঠ, চা পাতা, সুপারি, সার, কয়লা, মোবাইল, মোবাইলের বিভিন্ন অংশ, চশমা, ফলমূল, ভোজ্য তেল, ডিজেল, বিভিন্ন প্রকার বীজ, চিংড়ি মাছের পোনা, কফি, চকোলেট এবং গবাদিপশু।
অভিযানে ৫৭টি সিএনজি, ৫৩টি মোটরসাইকেল, ২০৬টি নৌকা ও বিভিন্ন প্রকার যানবাহনও জব্দ করা হয়।
অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য জব্দ
বিজিবির অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্রের মধ্যে ছিল দেশীয় ও বিদেশি পিস্তল, রিভলভার, এসএমজি, রাইফেল, হ্যান্ড গ্রেনেড, গোলাবারুদ ও গান পাউডার।
মাদকদ্রব্যের মধ্যে ৯ লাখের বেশি ইয়াবা ট্যাবলেট, ক্রিস্টাল মেথ আইস, হেরোইন, কোকেন, ফেনসিডিল, বিদেশি ও বাংলা মদ, গাঁজা, বিড়ি, সিগারেট, বিভিন্ন প্রকার ট্যাবলেট ও সিরাপ রয়েছে। এসব মাদক ও অস্ত্র সীমান্ত পাচারকারীদের বিরুদ্ধে বিজিবির কঠোর অবস্থানের প্রমাণ।
অভিযানে আটক ও প্রেরিত
সীমান্তে ইয়াবাসহ মাদক পাচার ও চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২১৩ জন চোরাচালানি সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে আটক হয়েছেন ২০৪ জন বাংলাদেশি ও ৯ জন ভারতীয় নাগরিক। এছাড়াও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করায় ৫৪০ জন মিয়ানমারের নাগরিককে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সীমান্ত নিরাপত্তায় বিজিবির অবদান
বিজিবির এই অভিযান দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এক বিরাট সাফল্যের দৃষ্টান্ত। নিয়মিত অভিযান ও গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে অবৈধ কার্যক্রম ঠেকাতে বিজিবি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এতে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি মাদক ও অস্ত্র পাচার বন্ধে বড় ভূমিকা পালন করছে।
গত কয়েক মাসে বিজিবি কয়েকবার বড় বড় অভিযানের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ পণ্য জব্দ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, আগস্ট ২০২৪ মাসে ২৭২ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য জব্দ করা হয়। এসব অভিযান দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অবৈধ প্রবাহ রোধে সহায়ক হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিজিবির এই ধরণের অভিযান দেশের সীমান্ত অঞ্চলের অপরাধ প্রবণতা কমাতে এবং নিরাপদ বাণিজ্য নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখছে। তবে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে আরও সমন্বিত ও প্রযুক্তিনির্ভর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
ভবিষ্যতে পদক্ষেপ ও চ্যালেঞ্জ
বিজিবি সীমান্তে অপরাধ দমনে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, সীমান্ত গার্ডের প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি ও স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ।
তবে সীমান্ত এলাকা জটিল ভৌগোলিক ও সামাজিক কারণে অপরাধী কার্যক্রম বন্ধে চ্যালেঞ্জ থেকে যায়। বিশেষ করে মাদক পাচার ও চোরাচালানের ক্ষেত্রে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সমন্বয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও অপরিহার্য।
শেষ কথা
বিজিবির জুলাই মাসের অভিযান দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অবৈধ পণ্য ও মাদক পাচার প্রতিরোধে এসব অভিযান অব্যাহত রাখার মাধ্যমে দেশের সুরক্ষা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তবে সীমান্ত নিরাপত্তায় আরও শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এম আর এম – ০৮১৩, Signalbd.com