সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক কারাগারে হার্ট অ্যাটাকের পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সোমবার (২৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে দ্রুত রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হার্ট অ্যাটাকের পরপরই তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সময়ক্ষেপণ না করে তাকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল তার চিকিৎসায় যুক্ত হয়েছেন।
কারা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, খায়রুল হককে কারাগারে রাখার সময় নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হতো। তবে হঠাৎ করেই তার বুকে ব্যথা শুরু হয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং প্রয়োজনে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হবে।
গ্রেপ্তার থেকে কারাগারে যাওয়ার ঘটনা
এর আগে গত ২৪ জুলাই ধানমন্ডির বাসা থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এটি ছিল দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো সাবেক প্রধান বিচারপতিকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ও জেলহাজতে পাঠানোর ঘটনা, যা সে সময় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
বিচারপতি খায়রুল হকের কর্মজীবন
এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ঐতিহাসিক রায় প্রদান করে। এর ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ হয়ে যায় এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হয়।
তার ক্যারিয়ার জুড়ে তিনি ছিলেন আলোচিত ও সমালোচিত এক ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন সময়ে দেওয়া রায় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সমাজে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।
চিকিৎসকদের ভূমিকা ও সর্বশেষ অবস্থা
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকদের একটি বিশেষজ্ঞ টিম তার প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করেছে। প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক জানান, “হার্ট অ্যাটাকের পরে তার শারীরিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। তবে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন।”
আইনজীবী ও পরিবার সূত্রের প্রতিক্রিয়া
খায়রুল হকের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তার স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে আদালতে নতুন আবেদন দাখিলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তারা বলছেন, মানবিক দিক বিবেচনায় তার জামিন পাওয়া উচিত।
অন্যদিকে পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি হৃদরোগে ভুগছিলেন। গ্রেপ্তারের পর থেকে তার স্বাস্থ্যের যথাযথ যত্ন নেওয়া হয়নি বলে পরিবারের অভিযোগ।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতিকে জেলহাজতে রেখে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত না করা হলে তা হবে অমানবিক আচরণ।
অপরদিকে অনেকেই মনে করছেন, তিনি যেহেতু গুরুতর মামলার আসামি, তাই আইনের শাসন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। তবে মানবিক বিবেচনায় তাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে।
বিশ্লেষণ: সামনে কী হতে পারে
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতির শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলে আদালত জামিন বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নিতে পারে। আবার রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় জামিন দেওয়া কঠিন হবে।
যেভাবেই হোক, একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি হিসেবে তার অসুস্থতা ও চিকিৎসা এখন জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
সংক্ষিপ্তসার
কারাগারে হার্ট অ্যাটাকের পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বর্তমান অবস্থা দেশের জনগণকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। আইনি লড়াই, চিকিৎসা ও মানবিক প্রশ্ন—সবকিছু মিলিয়ে এই ঘটনাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এক জটিল পরিস্থিতি। এখন সবার দৃষ্টি তার সুস্থতা ও আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকে।
এম আর এম – ১০৪০, Signalbd.com



