রাজবাড়ী সদর উপজেলায় চাঁদাবাজির মামলাটি প্রত্যাহার না করায় এক ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিককে প্রকাশ্যে রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
ঘটনার বিস্তারিত
সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুর আনুমানিক দেড়টার দিকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তির নাম সিদ্দিক শেখ (৪৫), যিনি কাজীবাঁধা গ্রামের বাসিন্দা এবং “আল রাজী ডায়াগনস্টিক সেন্টার”-এর মালিক।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, দুপুরের দিকে কয়েকজন যুবক হঠাৎ করেই সিদ্দিক শেখের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের হাতে ছিল রড, হাতুড়ি ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্র। রাস্তার মাঝে ফেলে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয় তাকে। এক পর্যায়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
কী বলছেন ভুক্তভোগী সিদ্দিক শেখ?
হাসপাতালে শুয়ে সিদ্দিক শেখ বলেন, “প্রায় তিন মাস আগে স্থানীয় সন্ত্রাসী পলাশ আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি তার বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করি। এরপর থেকেই আমাকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। আমি রাজি না হওয়ায় আজ আমাকে পলাশ, মানিক, কুটি, সায়েক ও মো. জিয়াসহ কয়েকজন মিলে রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে।”
তার দাবি, হামলাকারীরা তাকে প্রাণে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই হামলা চালিয়েছে। তিনি তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
চিকিৎসকদের বক্তব্য
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শাওন দে সরকার জানান, “আহত অবস্থায় রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তার মাথা, পিঠ ও হাতে গুরুতর আঘাত রয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আমরা তাকে ফরিদপুর মেডিকেলে রেফার করি।”
চাঁদা চেয়ে হুমকি, এরপর মামলা
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিদ্দিক শেখ তার ডায়াগনস্টিক ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে গেলে এলাকার প্রভাবশালী কিছু চাঁদাবাজ তার কাছ থেকে টাকা দাবি করে। তিনি চাঁদা না দিয়ে বরং আদালতের আশ্রয় নেন, যা হামলাকারীরা ভালোভাবে নেয়নি। মামলা দায়েরের পর থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
এই ঘটনার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে আবারও প্রশ্ন উঠেছে—কীভাবে দিনের বেলায়, হাসপাতালের সামনের ব্যস্ত রাস্তায় এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটতে পারে, অথচ কেউ বাধা দিল না?
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান
রাজবাড়ী সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাসেল মোল্লা বলেন, “আমরা ঘটনার পরপরই এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, এলাকায় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
প্রতিক্রিয়া: ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক
এই ঘটনায় রাজবাড়ী শহরের অন্যান্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ব্যবসায়ী মহলে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই বলছেন, সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এরকম ঘটনা আরও বাড়বে। একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা নিজের ব্যবসা নিয়ে এখন নিরাপদ নই। পুলিশ যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।”
বিচারহীনতার সংস্কৃতি কী আরও এক হামলার জন্ম দিল?
বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের প্রকাশ্য হামলা বিচারহীনতার সংস্কৃতিরই অংশ। পূর্বেও চাঁদাবাজি ও হুমকির ঘটনায় একাধিক মামলা হলেও অনেক সময়ই দোষীরা শাস্তি পায় না। এর ফলে তারা আরও সাহসী হয়ে ওঠে। এই ঘটনার পর প্রশাসনের তৎপরতা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে এমন অপরাধ বন্ধ করতে।
সারসংক্ষেপ
ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সিদ্দিক শেখের উপর হামলার ঘটনায় রাজবাড়ীতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একজন উদ্যোক্তার উপর প্রকাশ্য হামলা প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপ ও স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়ার ওপর।
এম আর এম – ০৩৩৭, Signalbd.com



