আঞ্চলিক

দিনে স্কুলশিক্ষক, রাতে ভয়ংকর ডাকাত

Advertisement

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় ধরা পড়েছে চারজন। চাঞ্চল্যকর তথ্য—ডাকাত দলের মূলহোতা একজন স্কুলশিক্ষক। দিনভর শিক্ষার আলো ছড়ালেও রাত নামলেই হয়ে যেতেন অপরাধের অন্ধকারের অধিকারী।

কিভাবে ধরা পড়লেন শিক্ষক মোক্তার হুসাইন?

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার শ্রীরাঙ্গাল গ্রামের বাসিন্দা মোক্তার হুসাইন ওরফে মোকা (৪৫) একজন ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক ও শিক্ষক ছিলেন। ‘দ্য ন্যাশনাল ইসলামিক প্রি ক্যাডেট স্কুল’ পরিচালনার পাশাপাশি, তিনি একটি সুপরিকল্পিত ডাকাত দলের প্রধান ছিলেন। সম্প্রতি ভাঙ্গা উপজেলার চুমুরদী ইউনিয়নের পূর্ব সদরদী গ্রামে দুই প্রবাসীর বাড়িতে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানায়, ডাকাতরা বাড়ির মালিকসহ নারী সদস্যদেরও কুপিয়ে আহত করে। এরপর ভুক্তভোগীরা মামলা করলে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মোক্তার এবং তার সহযোগী কিবরিয়া শেখকে গ্রেপ্তার করে।

কে কে ছিলেন এই ডাকাত দলের সদস্য?

গ্রেপ্তারকৃত চারজন হলেন:

  • মোক্তার হুসাইন ওরফে মোকা (৪৫) – শিক্ষক ও মাস্টারমাইন্ড
  • কিবরিয়া শেখ (৩৫) – পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি
  • শহিদুল ওরফে শহিদ (৪৫) – মুকসুদপুর উপজেলার বাসিন্দা
  • পার্থ রায় (৪২) – বোয়ালমারী উপজেলার বাসিন্দা

তাদের সবারই ভিন্ন পেশা থাকলেও, রাত নামলেই তারা একত্রিত হতেন একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য হিসেবে।

পুলিশ কিভাবে তদন্ত এগিয়েছে?

ভাঙ্গা থানার এসআই মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা গোপন সূত্রে জানতে পারি ডাকাত দল আবার ফিরে আসতে পারে। ফলে বিভিন্ন পয়েন্টে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। অভিযান চালিয়ে আমরা চারজনকে গ্রেপ্তার করেছি।”

পুলিশ জানিয়েছে, এদের কাছ থেকে পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়েছে, যা ডাকাতির সময় ব্যবহৃত হয়েছিল। এছাড়াও, তাদের আরও কয়েকজন সহযোগী পলাতক রয়েছে, যাদের ধরতে অভিযান চলছে।

পূর্বের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড

৩০ মে আলগি ইউনিয়নের শাহামুল্লুকদী গ্রামেও একই রাতে দুইটি বাড়িতে ডাকাতি ঘটে। সেই ঘটনায়ও এই একই দলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে, তারা পূর্বেও একাধিক এলাকায় ডাকাতি করেছে এবং প্রতিবারই ভিন্ন পেশার ছদ্মবেশে আত্মগোপনে ছিল।

কীভাবে একজন শিক্ষক এতো বড় অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন?

সাধারণত একজন শিক্ষককে সমাজের মূল্যবান ও সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু মোক্তার হুসাইন ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি দিনে শিশুদের নৈতিকতা ও জ্ঞানের পাঠ দিতেন, অথচ রাত হলেই হয়ে উঠতেন ভয়ঙ্কর এক অপরাধী। পুলিশি তদন্তে জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই ডুয়েল লাইফ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।


“ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক মোক্তার ছিলেন এই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের মূল পরিকল্পনাকারী।” — এসআই মোশাররফ হোসেন, ভাঙ্গা থানা

সারসংক্ষেপ  


ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সম্প্রতি সংঘটিত একটি প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনার পর একে একে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, ডাকাত দলের নেতৃত্বে ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক, যিনি দিনের বেলা কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা দিতেন, আর রাত নামলেই হয়ে যেতেন ডাকাতির মাস্টারমাইন্ড।


শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। কিন্তু যখন সেই পেশার আড়ালে লুকিয়ে থাকে অন্ধকার, তখন তা সমাজের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। মোক্তার হুসাইনের মতো ব্যক্তিরা কেবল আইনের চোখে অপরাধী নয়, সামাজিক মূল্যবোধেরও হত্যাকারী। প্রশ্ন উঠছে—আরও কতজন এইভাবে ছদ্মবেশে লুকিয়ে অপরাধ করে চলেছে? ভবিষ্যতে এমন চক্র ধরতে আরও কৌশলী হতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

এম আর এম – ০২৬৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button