বাংলাদেশ

এনবিআর চাকরি জরুরি সেবা, কর্মস্থলে না ফিরলে শাস্তি

অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সব ধরনের চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে ঘোষণা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি কর্মস্থলে না ফিরে তাদের দায়িত্ব পালন না করেন, তবে দেশের অর্থনীতি ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সরকারের এই ঘোষণা পেছনে রয়েছে চলমান এনবিআরের কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও বেতন-ভাতা সংক্রান্ত দাবির কারণে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের ব্যাপক ব্যাহত হওয়া। এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায় দুই মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন, যার ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজস্ব আদায়ে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।

এনবিআরের কর্মকাণ্ড বন্ধের ফলে দেশে বিপর্যয়: পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বড় ধরনের অচলাবস্থা

অবিরাম কর্মবিরতির কারণে দেশের সব কাস্টম হাউস, বন্ড কমিশনারেট, শুল্ক স্টেশন, আইসিডি ও বন্দরগুলোতে আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ঢাকার এনবিআর ভবন থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, বেনাপোল, সোনামসজিদ ও অন্যান্য স্থলবন্দরগুলোতে রাজস্ব আদায়ের কাজ থেমে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পণ্যের গুদামজাতকরণ ও সরবরাহের জটিলতায় দেশের বাজারে নানা ধরনের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বাণিজ্যিক স্থবিরতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

সরকারের উদ্বেগ ও পদক্ষেপ: দুর্বল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা সংস্কারে গুরুত্ব

সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের বাজেট ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বড় বাধা হলো দুর্বল ও অপ্রতুল রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা। রাজস্ব আহরণের দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে বড় ধাক্কা লেগেছে। তাই বর্তমান সরকার এনবিআর পুনর্গঠন ও সংস্কারের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

সরকার বলেছে, রাজস্ব বোর্ডের কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নিতে অস্বীকার করেছেন। এই কারণে কার্যক্রম বন্ধ রেখে দেশের অর্থনীতিকে চরম ক্ষতির সম্মুখীন করেছেন।

‘অত্যাবশ্যকীয় সেবা’ ঘোষণা কী? কেন জরুরি?

অত্যাবশ্যকীয় সেবা বলতে বোঝায়, এমন সেবা বা কাজ যা দেশের সাধারণ মানুষ ও অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য। এনবিআরের কাজ যেমন পণ্য আমদানি-রপ্তানি, শুল্ক আদায় ও বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ, তা দেশের অর্থনীতির রক্তসঞ্চার। তাই সরকারের পক্ষ থেকে এই সেবা বন্ধ হলে তা দেশের স্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও বাণিজ্যিক চুক্তি পূরণ এবং দেশের বাজার সুষ্ঠুভাবে চালাতে এনবিআরের কাজ চলমান রাখা অত্যন্ত জরুরি। তাই এর সব কর্মকাণ্ডকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

এনবিআরের আন্দোলন ও এর প্রভাব: বাস্তবতা ও সমাধান পথ

বর্তমানে এনবিআরের কর্মচারীরা বেতন, কর্মপরিবেশ এবং অন্যান্য দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাদের দাবি অবশ্য গুরুত্ব দেওয়ার যোগ্য, তবে কর্মস্থলে না গিয়ে দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলা যুক্তিযুক্ত নয়।

সরকার তাদের দাবি গ্রহণ করেছে এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা এখনো অবস্থান থেকে সরে আসেননি। এর ফলে আমদানি-রপ্তানি বিলম্বিত হচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে এবং রাজস্ব সংগ্রহের হার ক্রমেই কমছে।

সরকারের পরবর্তী করণীয়: কঠোর ব্যবস্থা ও আইনানুগ পদক্ষেপ

সরকার এনবিআরের সকল কর্মকর্তাদের সরাসরি কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে। যদি তাঁরা অনতিবিলম্বে কাজ শুরু না করেন, তবে আইন অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষার চেষ্টা করা হবে।

এছাড়া, দুর্নীতি ও অনিয়ম কমানোর লক্ষ্যে এনবিআর পুনর্গঠন ও সংস্কারের কাজ অব্যাহত থাকবে। নতুন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা হবে।

ব্যবসায়ীদের বক্তব্য: দ্রুত সমাধানের প্রয়োজনীয়তা

বাণিজ্য সংগঠন ও ব্যবসায়ীরা সরকারের এই কঠোর অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, চলমান কর্মবিরতি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তাই দ্রুত সমাধান ও চলমান কার্যক্রম স্বাভাবিক করা আবশ্যক।

তারা আশা করছেন, এনবিআর কর্মকর্তাদের সাথে সরকারের আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধান আসবে, যাতে দেশের অর্থনীতি সচল থাকে এবং ব্যবসায়িক পরিবেশে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

এনবিআরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: উন্নয়ন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা

অন্তর্বর্তী সরকার এনবিআরের কাঠামোগত সংস্কার এবং আধুনিকায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থায় প্রযুক্তি ও আধুনিক প্রক্রিয়া চালু করে দুর্নীতি রোধ ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে।

একই সঙ্গে এনবিআরের কর্মকর্তাদের কাজের পরিবেশ উন্নত করে, তাদের দক্ষতা বাড়িয়ে দেশের রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করা সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এনবিআরের কর্মচারীদের দাবিও গুরুত্বপূর্ণ হলেও, দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ জনগণের স্বার্থ রক্ষায় অত্যাবশ্যকীয় সেবার দায়িত্ব পালন অপরিহার্য। অন্তর্বর্তী সরকার এই দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করতে এনবিআরের সব ধরনের চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং কর্মস্থলে না ফেরালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

অর্থনীতির সুষ্ঠু কার্যক্রম ও দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য এই সংকট দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন। এনবিআর কর্মচারীদেরও উচিত সরকারের আহ্বান মেনে দেশে আর্থিক ও বাণিজ্যিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহযোগিতা করা।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button