ডেঙ্গুতে ফের ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫৯

দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ আবারও বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেছে আরও দুজনের। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, নতুন করে ১৫৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে।
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ আবারও বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে ১৫৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে।
কী ঘটেছে – মৃত্যুর তথ্য ও নতুন আক্রান্তের সংখ্যা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়কালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুজন পুরুষ মারা গেছেন। এদের মধ্যে একজনের বয়স ৭২ বছর, অন্যজনের বয়স ৫০ বছর।
একই সময়ে সারা দেশে নতুন করে ১৫৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই তথ্য দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির ভয়াবহতা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
কোন এলাকায় কতজন ভর্তি – অঞ্চলভিত্তিক বিশ্লেষণ
বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে বরিশালে – সংখ্যা ১০৭ জন। এরপর রয়েছে:
- ঢাকা মহানগর: ২১ জন
- ঢাকা বিভাগ (সিটি করপোরেশন ব্যতীত): ১২ জন
- চট্টগ্রাম: ১১ জন
- রাজশাহী: ৬ জন
- সিলেট: ২ জন
এই পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে যে শুধু রাজধানী নয়, বরং জেলা পর্যায়েও ডেঙ্গুর সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বাড়ছে।
সার্বিক চিত্র – চলতি বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি
২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২২ জন পুরুষ এবং ১৮ জন নারী। মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২২২ জনে।
এই সংখ্যাটি শুধু স্বাস্থ্যগত উদ্বেগই নয়, বরং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর বিরাট চাপ সৃষ্টি করছে।
আগের বছরগুলোর তুলনায় অবস্থান কোথায়?
গত বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর সংক্রমণ কিছুটা বিলম্বে শুরু হলেও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ২০২৪ সালে জুন মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৮ জন, সেখানে এ বছর জুনেই মৃত্যুর সংখ্যা ৪০-এ পৌঁছেছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তন, অপর্যাপ্ত মশা নিয়ন্ত্রণ, ও মানুষের সচেতনতার অভাব এই বৃদ্ধির মূল কারণ।
স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্কতা ও পরামর্শ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জনগণকে পরামর্শ দিয়েছে—ঘরের আশপাশে কোথাও পানি জমে থাকতে না দেওয়া, ফুলদানি ও ডাবের খোলস নিয়মিত পরিষ্কার রাখা, মশারি ব্যবহার করা এবং ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন:
“আমরা স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশনকে একযোগে কাজ করতে বলেছি। তবে জনসচেতনতাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় অস্ত্র।”
প্রতিক্রিয়া ও জনমনে উদ্বেগ
রাজধানীর বাসিন্দা ফারজানা হোসেন বলেন, “সিটি করপোরেশনের ফগিং হয়তো হয়, কিন্তু সেটি অনেক সময় অপ্রতুল। আমরা নিজেরাই এখন সতর্ক থাকছি।”
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থায় শুধু হাসপাতাল প্রস্তুত করলেই চলবে না, বরং আগাম পরিকল্পনা, এলাকার মশা নিধন কার্যক্রম ও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
সারসংক্ষেপ
ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে। বর্ষাকাল ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রশাসন ও জনসাধারণ — উভয়কেই সমানভাবে সচেতন না হলে এ বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—সমন্বিত পদক্ষেপের অভাবে এই মৃত্যু মিছিল কি থামবে, নাকি আরও বাড়বে?
এম আর এম – ০০৭৬, Signalbd.com