২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু ৩ জনের, নতুন শনাক্ত ১৯

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে তিনজনের, শনাক্ত হয়েছেন ১৯ জন। নমুনা পরীক্ষার পরিসংখ্যানে সংক্রমণের হার কিছুটা বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্যে এসব জানা যায়।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১৯ জন। পরীক্ষাকৃত ৪০৬টি নমুনার মধ্যে এই রোগীদের শনাক্ত করা হয়েছে।
ঘোষণার বিস্তারিত ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য
সোমবার (২৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও হালকা হলেও উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
গতকাল সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ে মোট ৪০৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৯টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। মৃত্যু হয়েছে তিনজনের, যাদের মধ্যে দুইজন চট্টগ্রাম বিভাগ এবং একজন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯,৫১৮ জনে। আর মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০,৫১,৯৯৭ জনে।
পূর্বপটভূমি ও অতীতের প্রেক্ষাপট
করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ। ওই বছরের ১৮ মার্চ ছিল প্রথম মৃত্যুর খবর। শুরুতে ধীরে ধীরে বিস্তার ঘটলেও ২০২১ সালে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়।
বিশেষ করে ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট, দুটি দিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জন করে মৃত্যুবরণ করেছিলেন করোনায়। এরপর সংক্রমণ হ্রাস পেতে থাকে টিকাদান কর্মসূচি ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের ফলে।
২০২৩ ও ২০২৪ সালে সংক্রমণ প্রায় নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মাঝেমধ্যে আবারও হালকা সংক্রমণের খবর আসে। ২০২৫ সালেও সেই চিত্র বদলায়নি।
চলতি বছরের করোনা পরিস্থিতি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তাদের মধ্যে ৮ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারী। বিভাগের হিসেবে দেখা যায়, ঢাকায় ৭ জন, চট্টগ্রামে ৯ জন এবং খুলনায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং মোট শনাক্ত হয়েছেন ৪৫২ জন। এই সংখ্যাটি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কিছুটা কম হলেও সম্প্রতি শনাক্ত হার কিছুটা বেড়েছে।
পরিসংখ্যান ও সংক্রমণ হার
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবমতে, দেশে মোট শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৩.০৫ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ৮.৬৮ শতাংশ, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় সামান্য বেশি।
এই হার বলছে, সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে থাকলেও একেবারে শূন্য নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত ও জনসচেতনতা
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস এখনও পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। অনেক ক্ষেত্রেই এটি মৌসুমী ভাইরাসের মতো আচরণ করছে।
বিশেষ করে যেসব মানুষ বয়স্ক, বা দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভুগছেন—তাদের জন্য ঝুঁকি এখনো থেকেই যায়।
ডা. মাহমুদ হাসান, জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের একজন ভাইরোলজিস্ট বলেন,
“করোনার নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট না আসা পর্যন্ত বড় আকারের সংক্রমণের আশঙ্কা কম। তবে হালকাভাবে চলমান সংক্রমণকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, এখনো যারা টিকা নেননি বা দ্বিতীয় বা বুস্টার ডোজ পাননি, তাদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
ভবিষ্যৎ আশঙ্কা
বর্তমানে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকলেও সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত বলা যায় না। নমুনা পরীক্ষার হার কম হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত তথ্য ধরা পড়ে না।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বারবার বলছে, সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরিধান, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং টিকা গ্রহণের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—জনগণের মধ্যে করোনা নিয়ে যে শৈথিল্য এসেছে, তা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কি আরও একবার সংক্রমণের ঢেউ আসবে?
এম আর এম – ০০১৪, Signalbd.com