খামেনিকে হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনায় ভেটো দেন ট্রাম্প

সম্প্রতি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার একটি পরিকল্পনা করেছিল ইসরায়েল, যার ওপর ভেটো দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ঘটনা নতুন করে ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। মার্কিন প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র মতে, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি রুখে দিতে সম্প্রতি দেশটিতে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানের ধারাবাহিকতায় তারা ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর আঘাত হানার প্রস্তুতি নেয়। এতে আয়াতুল্লাহ খামেনিকে টার্গেট করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই পরিকল্পনায় ভেটো দেন।
মার্কিন কর্মকর্তাদের মন্তব্য
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “ইরান এখন পর্যন্ত কোনো মার্কিন নাগরিককে হত্যা করেনি। কাজেই তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তু করার যৌক্তিকতা নেই।” ট্রাম্পের প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতে, ইসরায়েল ইরানের শীর্ষ নেতাকে হত্যার সুযোগ পেয়েছিল এবং বিষয়টি ট্রাম্পকে জানানো হয়। তবে ট্রাম্প ওই পরিকল্পনা থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন। যদিও তিনি নিজেই বার্তাটি দিয়েছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ
ইসরায়েল ও ইরানের সাম্প্রতিক সংঘাতের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ চলছিল। এই সময়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং ট্রাম্পের মধ্যে ঘন ঘন আলাপ হয় বলে জানানো হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন চেয়েছিল যেন ইসরায়েল ইরানে আক্রমণের মাত্রা সীমিত রাখে এবং আন্তর্জাতিক পরিণতি বিবেচনায় নেয়। তবে নেতানিয়াহু এসব প্রশ্নে মন্তব্য করতে রাজি হননি। রোববার ফক্স নিউজের ‘স্পেশাল রিপোর্ট উইথ ব্রেট বায়ার’ অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “অনেক ভুয়া প্রতিবেদন ছড়ানো হচ্ছে। আমি এসব নিয়ে আলোচনায় যাব না।”
তবে তিনি ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলেন, “আমরা যা প্রয়োজন, সেটাই করব। আর আমি বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রও জানে কোনটা তাদের জন্য ভালো।”
পরমাণু আলোচনা স্থগিত
ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার মধ্যে ওমানে পূর্বনির্ধারিত একটি পরমাণু আলোচনা বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। এই বৈঠকের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘ বিরতির পর আবারও সংলাপে বসার কথা ছিল। তবে ইসরায়েলি হামলার কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ইসরায়েলের সব পরিকল্পনার কথা আমরা জানতাম। তবে আমরা মনে করি, এখনো সময় আছে আলোচনা ও কূটনৈতিক সমাধানের।” ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন যে, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি পুনর্বহালের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো আগ্রহী।
নেতানিয়াহুর প্রতিক্রিয়া
ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, “ইরান যখন আমাদের লক্ষ্য করে হামলা শুরু করেছিল, আমরা তখনই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অবহিত করেছি।” তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েল নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা করা দরকার, তা করব।”
বিশ্লেষণ: সম্পর্কের জটিলতা
এই ঘটনার মাধ্যমে একটি বিষয় স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা থাকলেও তাদের কৌশলগত অবস্থান সবসময় এক নয়। খামেনিকে হত্যার মতো একটি স্পর্শকাতর পদক্ষেপে ট্রাম্পের বিরোধিতা এটাই প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ইরান ইস্যুতে কূটনৈতিক সমাধানকেই প্রাধান্য দিতে চায়।
বিশ্লেষকদের মতে, খামেনিকে হত্যার মতো পদক্ষেপ নিলে তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারত। শুধু ইরান নয়, লেবানন, সিরিয়া, ইরাকসহ আরও কয়েকটি দেশ এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ত।
ট্রাম্পের ভূমিকায় পরিবর্তন?
ট্রাম্পের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়েই ২০১৮ সালে ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়েছিলেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি আগের তুলনায় কিছুটা সংযত এবং কূটনৈতিক পথকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
উপসংহার
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বহুদিনের। তবে সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও সম্ভাব্য ‘টার্গেট কিলিং’-এর পরিকল্পনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ আপাতত একটি বড় সংঘাত এড়াতে সাহায্য করেছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হলে কেবল সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং কূটনৈতিক উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক সমঝোতাই একমাত্র কার্যকর পথ হতে পারে।