ক্রিকেট

নাজমুল হোসেন শান্তের ১৯ মাস পর তুমুল সেঞ্চুরি

দীর্ঘ ১৯ মাস পর ফের এক অভূতপূর্ব সেঞ্চুরির মালিক হলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত। গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে নিজের ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি করে ক্রিকেটাঙ্গনে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করলেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। কঠিন পরিস্থিতিতে দলকে শক্ত ভিতে দাঁড় করানো শান্তের ইনিংস বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলে ধারণা করা হচ্ছে।

১৯ মাস পর সেঞ্চুরি, শান্তের ক্রিকেট কাহিনীর নতুন অধ্যায়

বাংলাদেশ দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্তের ব্যাটে এবার এসেছে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেঞ্চুরি। তাঁর আগের সেঞ্চুরি ছিল ২০২৩ সালের নভেম্বরে সিলেট টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এরপর দীর্ঘ সময় ধীরে ধীরে ফর্মের খোঁজে ছিল এই বাঁহাতি ব্যাটার। তবে আজকের গল টেস্টে ২১৫ বল মোকাবিলা করে ১০৪ রান করে মাঠ মাতালেন শান্ত। তাঁর খেলায় ছিল সাবলীলতা, সংযম এবং নিখুঁত টেকনিক, যা অভিজ্ঞতার সাক্ষ্য দেয়।

প্রথম সেঞ্চুরি অর্জনের পর ২০২১ সালে পাল্লেকেলে একই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্মরণীয় ইনিংস খেলেছিলেন শান্ত। সেই অভিজ্ঞতাই এই মাঠে ফের গর্বের মাইলফলক গড়ে তুলেছে।

চাপের মাঝে স্বপ্নপূরণ

বাংলাদেশের শুরুটা ছিল বেশ নাজুক। প্রথম ৪৫ রানে তিনটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ভেঙে পড়ে বলে মনে হচ্ছিল। তবে শান্ত ও উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম মিলে অবিশ্বাস্য এক জুটি গড়ে দলকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ এনে দেয়। এই চতুর্থ উইকেটে ১৯৯* রানের অনবদ্য জুটিতে বাংলাদেশ টিমের মর্যাদা অনেকটা রক্ষা পায়।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এই ১৯৯ রানের জুটি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি হিসেবে নথিভুক্ত হলো। ২০১৮ সালে লিটন দাস ও মুমিনুল হক গড়া ১৮০ রানের রেকর্ডকেও অতিক্রম করলেন তারা। শান্তের ব্যাটিংয়ে ছিল একরাশ আত্মবিশ্বাস, যা দীর্ঘদিন পর আসা সেঞ্চুরির প্রমাণ।

অধিনায়ক হিসেবে শান্তের ভাবনা ও ব্যাটিং পজিশন নিয়ে রহস্য

সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছিল অধিনায়ক শান্তের ওপেনিংয়ে নামার সম্ভাবনা নিয়ে। যদিও সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি সরাসরি এই বিষয়ে কিছু জানাননি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গল টেস্টে চার নম্বর ব্যাটিং পজিশনে নামেন। “আমার ব্যাটিং পজিশন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত আজকের (১৭ জুন) ম্যাচের আগে জানানো হবে, যাতে প্রতিপক্ষ আগে থেকেই ধারণা না পায়,” বলেও তথ্য দিয়েছেন তিনি।

গত কয়েক বছর ধরে শান্ত তিন নম্বর অথবা চার নম্বরে ব্যাটিং করেছেন। বিশেষ করে ২০২১ সালে পাল্লেকেলে তিন নম্বরে নামার পর তিনি ১৬৩ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেছিলেন। ওপেনিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকলেও অধিনায়ক হিসেবে দলের সর্বোচ্চ সাফল্যের জন্য সঠিক পদে থাকা তার অন্যতম লক্ষ্য।

মুশফিকের সঙ্গেও সাফল্যের সমাহার

শান্তের সেঞ্চুরির সময় সতীর্থ মুশফিকুর রহিমও অসাধারণ অবদান রেখেছেন। ৮৯ রানে অপরাজিত থাকা মুশফিক এই জুটির অংশ হিসেবে দলের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছেন। মুশফিকও সেঞ্চুরির পথে হাঁটছেন, যা দলের জন্য দারুণ সুখবর।

শান্তের সেঞ্চুরি ও বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্যাটিং বিভাগে শান্তের সেঞ্চুরি একটি বড় ধরনের ইতিবাচক সংকেত। দেশের ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরে যেসব ব্যাটসম্যানদের প্রতি নির্ভরশীলতা ছিল, তাদের মধ্যে শান্তের ফর্ম ফিরলে নতুন শক্তি যোগাবে। বিশেষ করে তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এটি একটি অনুপ্রেরণা।

এই সেঞ্চুরির মাধ্যমে শান্ত প্রমাণ করলেন, সঠিক মনের স্থিতি আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যেকোনো ফর্ম সংকট জয় করা সম্ভব। বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে শান্তের এই সাফল্য নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর পাথেয় হয়ে থাকবে।

সেঞ্চুরির পর শান্তের অনুভূতি

শান্ত বলছেন, “দীর্ঘদিন পর আবার সেঞ্চুরি পাওয়া সত্যিই খুবই আনন্দের। কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের ফলাফল এটি। আমার সতীর্থদের সহায়তায় এবং কোচিং স্টাফদের নির্দেশনায় আজকের এই সাফল্য এসেছে।”

তিনি আরও জানান, “টিমের জন্য সবসময়ই ভালো কিছু করার চেষ্টা করি। আশা করছি এই সেঞ্চুরি বাংলাদেশের জন্য বড় একটি ইতিবাচক বার্তা হবে।”

ভবিষ্যতে শান্তের লক্ষ্য

বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের আগামী পরিকল্পনা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানিয়েছেন, নিজেকে আরও পরিপক্ক করার জন্য কঠোর অনুশীলন করবেন এবং দলের জন্য যেকোনো পরিস্থিতিতে ভালো খেলার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

শান্তর জন্য এখন লক্ষ্য আরও বড়—শ্রীলঙ্কা সিরিজ জয় এবং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের নাম উজ্জ্বল করা।

নাজমুল হোসেন শান্তের ১৯ মাস পর টেস্ট সেঞ্চুরি বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন অধ্যায় সূচিত করেছে। কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য এবং অভিজ্ঞতার মেলবন্ধন তাকে আবারো ফিরিয়ে এনেছে সাফল্যের শিখরে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে এই সেঞ্চুরি শুধু তার নয়, পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বড় প্রেরণা।

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট এখন ধাপে ধাপে শক্তিশালী হচ্ছে, আর এই প্রক্রিয়ায় শান্তের অবদান অনস্বীকার্য। আগামীতেও তার এই আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা দলের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button