বিশ্ব

ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার চার বিমানঘাঁটি বিধ্বস্ত

রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলের চারটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় ৪০টিরও বেশি কৌশলগত বোমারু বিমান ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছে কিয়েভ। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় ও সফল আক্রমণগুলোর একটি, যা যুদ্ধের গতিপথে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

চার সামরিক ঘাঁটিতে একযোগে বিস্ফোরণ

রোববার (১ জুন) রাতে রাশিয়ার সাইবেরিয়ার বেলায়া, উসলস্কি, ভসক্রেসেনস্ক এবং একটি অজ্ঞাতনামা ঘাঁটিতে একযোগে ড্রোন হামলা চালানো হয়। ইউক্রেনের একজন উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, “এই বিশেষ অভিযানের লক্ষ্য ছিল ফ্রন্টলাইন থেকে বহু দূরে থাকা শত্রু বিমানঘাঁটিগুলো।”

তিনি আরও জানান, ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ এই অভিযান পরিচালনা করেছে। হামলার পর বেলায়া বিমানঘাঁটিতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড দেখা যায়। অন্যান্য ঘাঁটিতেও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়।

টিইউ-৯৫ ও টিইউ-২২ যুদ্ধবিমান ধ্বংস

ড্রোন হামলায় মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাশিয়ার দূরপাল্লার বোমারু বিমান টিইউ-৯৫টিইউ-২২। এই যুদ্ধবিমানগুলো ইউক্রেনে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে ব্যবহার করে আসছে রাশিয়া। কিয়েভের দাবি অনুযায়ী, এসব বিমান ধ্বংস হওয়ায় রাশিয়ার আকাশ-ভিত্তিক হামলা ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।

ভেতর থেকেই ড্রোন উৎক্ষেপণ

বিশ্লেষকদের মতে, ড্রোনগুলো ইউক্রেন থেকে সরাসরি উৎক্ষেপণ করা হয়নি বরং রাশিয়ার অভ্যন্তরে ট্রাকে করে এনে গোপনে স্থানান্তরিত করা হয়। একটি সূত্র জানিয়েছে, হামলার সাংকেতিক নাম ছিল ‘স্পাইডারওয়েব’, যার প্রস্তুতি চলে ১৮ মাস ধরে।

একাধিক ছবিতে দেখা যায়, কাঠের তৈরি কেবিনের ছাদে ড্রোন সাজিয়ে রাখা হয়েছে এবং ট্রাক থেকে সেগুলো ছোড়া হয়েছে। রাশিয়ার ‘ম্যাশ’ নামের একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয়রা ট্রাকের ওপর উঠে ড্রোন উৎক্ষেপণ থামাতে চেষ্টা করছেন।

আগুনে জ্বলছে বিমান, ধ্বংসের ভিডিও ভাইরাল

রয়টার্স এবং ইউক্রেইনস্কা প্রাভদা সহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, বিমানঘাঁটিগুলোর একাধিক স্থানে আগুন জ্বলছে। টিইউ-৯৫ এর মতো বড় বোমারু বিমান পুড়ছে এবং ধোঁয়া উঠছে আকাশে।

মস্কোর কাছে ভসক্রেসেনস্ক ঘাঁটির একটি ভিডিওতে এক রুশ সেনাসদস্যকে বলতে শোনা যায়, “এখানে সব ধ্বংস হয়ে গেছে।” তার পেছনে বোমারু বিমানগুলো আগুনে জ্বলছে।

রেলসেতু ধ্বংস ও বিস্ফোরণের ঘটনা

এই ড্রোন হামলার আগে রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক ও কুরস্ক অঞ্চলে দুটি সেতু বিস্ফোরণে ধসে পড়ে। এতে একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয় এবং অন্তত সাতজন নিহত হন। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেন-সমর্থিত গোপন অপারেশনেই এসব বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।

শান্তি আলোচনার আগেই বড় উসকানি?

এই হামলার সময়সন্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট হলো—তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ২ জুন রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা আলোচনার আগে রাশিয়ার ওপর একধরনের চাপ প্রয়োগ এবং ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনী।

রুশ প্রতিক্রিয়া ও সরকারি নিশ্চুপতা

রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এই হামলার ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে সাইবেরিয়ার ইরকুতস্ক অঞ্চলের গভর্নর ইগর কোবজেভ শ্রেদনি গ্রামে সামরিক ইউনিটে ড্রোন হামলার কথা নিশ্চিত করেছেন। এর বাইরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা ক্রেমলিন আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

ইউক্রেনের ড্রোন সক্ষমতার উত্থান

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার হামলা চালায়। শুরুতে ইউক্রেনের সামরিক শক্তি তুলনামূলক দুর্বল হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রোন প্রযুক্তি, আন্ডারকভার নেটওয়ার্ক ও বেসামরিক সহযোগিতার মাধ্যমে রাশিয়ার গভীরে একাধিক সফল অভিযান পরিচালনা করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এই ড্রোন হামলা শুধু একটি সামরিক কৌশল নয়, বরং রাশিয়ার মনস্তাত্ত্বিক ও কৌশলগত শক্তিকেও চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে ইউক্রেন।”

সাইবেরিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার ৪০টির বেশি বোমারু বিমান ধ্বংস

ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় চারটি বিমানঘাঁটি আক্রান্ত, ৪০টির বেশি বোমারু বিমান ধ্বংস। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইউক্রেনের সবচেয়ে ভয়াবহ অভ্যন্তরীণ অভিযান।

আরও সংশ্লিষ্ট খবরের জন্য Signalbd.com-এ চোখ রাখুন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button