
আজকের মহাজাগতিক বিস্ময় – পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ
আজকের রাতটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিশেষ এক মুহূর্ত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশ থেকে দেখা যাবে এক বিরল দৃশ্য— পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। চন্দ্রগ্রহণের এই বিশেষ ধরণটিকে বলা হয় ‘ব্লাড মুন’ বা রক্তিম চাঁদ। এই মুহূর্তে চাঁদ তার স্বাভাবিক রূপ বদলে রক্তিম লাল বা তামাটে রঙ ধারণ করে, যা আকাশপ্রেমীদের জন্য এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।
চন্দ্রগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
চন্দ্রগ্রহণ ঘটে তখনই, যখন পৃথিবী সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে এসে পড়ে এবং চাঁদ পৃথিবীর ছায়ায় ঢেকে যায়। সূর্যের আলো সরাসরি চাঁদে পৌঁছাতে না পারলেও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দিয়ে প্রতিফলিত হয়ে কিছু আলো চাঁদে পড়ে। এই আলোতে নীল তরঙ্গদৈর্ঘ্য ফিল্টার হয়ে যায় এবং লাল আলো চাঁদের পৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়। ফলে চাঁদ দেখতে লাগে রক্তিম বা তামাটে রঙের। এ কারণেই এই ঘটনাকে ‘ব্লাড মুন’ বলা হয়।
কখন শুরু হবে চন্দ্রগ্রহণ?
বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ২৮ মিনিটে আজকের চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে। ধাপে ধাপে গ্রহণের পর্যায়গুলো হলো:
- আংশিক গ্রহণ শুরু: রাত ৮:২৮ মিনিট
- পূর্ণগ্রাস গ্রহণ শুরু: রাত ১০:৩০ মিনিটের পর
- সর্বোচ্চ গ্রহণ: রাত ১১:৩০ মিনিটের কাছাকাছি
- পূর্ণগ্রাস গ্রহণ শেষ: রাত ১২:৫৫ মিনিটের পর
- আংশিক গ্রহণ সমাপ্ত: ভোররাত ৩টার পর
মোট সময়কাল হবে প্রায় ৭ ঘণ্টা ২৭ মিনিট। এর মধ্যে পূর্ণগ্রাস পর্যায় স্থায়ী হবে প্রায় ১ ঘণ্টা ২৬ মিনিট।
বাংলাদেশে কোথায় দেখা যাবে?
বাংলাদেশের আকাশ পরিষ্কার থাকলে দেশের সব প্রান্ত থেকে দেখা যাবে এই চন্দ্রগ্রহণ। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, রংপুর— সর্বত্র রাতের আকাশে ফুটে উঠবে এই অসাধারণ দৃশ্য।
দর্শনের জন্য কিছু টিপস:
✔ খোলা মাঠ বা উঁচু জায়গায় অবস্থান করুন।
✔ আলো দূষণ (Light Pollution) কম এমন জায়গা বেছে নিন।
✔ গ্রহণের ছবি তুলতে চাইলে ট্রাইপড ব্যবহার করুন।
বিশ্বের কোন কোন দেশে দেখা যাবে?
পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ সম্পূর্ণরূপে দেখা যাবে এশিয়ার বেশ কিছু দেশ, আফ্রিকার কিছু অংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চল থেকে।
- পূর্ণভাবে দৃশ্যমান: বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, পূর্ব আফ্রিকা।
- আংশিকভাবে দৃশ্যমান: ইউরোপের কিছু অংশ, মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব রাশিয়া।
- দৃশ্যমান হবে না: উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকার অধিকাংশ অঞ্চল।
কেন হয় ‘ব্লাড মুন’? বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ
যখন সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দিয়ে প্রতিফলিত হয়ে চাঁদে পৌঁছায়, তখন ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো (নীল, বেগুনি) ছড়িয়ে যায়, আর লাল আলো চাঁদের পৃষ্ঠে পড়ে। তাই চাঁদ তখন রক্তিম আভা ধারণ করে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, এই সময় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অবস্থা পরীক্ষা করারও সুযোগ পাওয়া যায়। বায়ুমণ্ডলে ধুলিকণা বা দূষণের মাত্রা বেশি থাকলে চাঁদ আরও বেশি লালচে দেখায়।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
বিভিন্ন সংস্কৃতিতে চন্দ্রগ্রহণকে রহস্যময় ঘটনা হিসেবে দেখা হয়। ইতিহাসে দেখা যায়, প্রাচীন যুগে চন্দ্রগ্রহণকে অশুভ সংকেত হিসেবে ধরা হতো। তবে আধুনিক যুগে এটি শুধুই বৈজ্ঞানিক ও প্রাকৃতিক এক বিস্ময়।
বাংলাদেশে অনেকে চন্দ্রগ্রহণের সময় নামাজ (সালাতুল কুসুফ) আদায় করেন। ইসলাম ধর্মে এটি সুন্নাত হিসেবে বিবেচিত।
২০২৫ সালের পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ কেন বিশেষ?
এই গ্রহণটি ২০২৫ সালের দ্বিতীয় পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। এর আগে মে মাসে একটি আংশিক গ্রহণ হয়েছিল। পরবর্তী পূর্ণগ্রাস গ্রহণ দেখা যাবে ২০২৯ সালে। তাই এ বছরের এই দৃশ্য একেবারেই বিরল ও স্মরণীয়।
চন্দ্রগ্রহণ ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন, চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, সূর্যের আলো ও চাঁদের পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়। নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA) এই সুযোগে ডেটা সংগ্রহ করে।
চন্দ্রগ্রহণ দেখার স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা টিপস
অনেকে মনে করেন চন্দ্রগ্রহণের সময় বাইরে থাকা ক্ষতিকর। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, চন্দ্রগ্রহণে স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। এটি নিরাপদ এবং খালি চোখেই দেখা যায়। তবে কিছু লোকছুট কুসংস্কার যেমন গর্ভবতী নারীদের জন্য অশুভ— এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
ফটোগ্রাফি প্রেমীদের জন্য সেরা সুযোগ
চন্দ্রগ্রহণের সময় ‘ব্লাড মুন’-এর ছবি তোলার জন্য ফটোগ্রাফাররা মুখিয়ে থাকেন। DSLR ক্যামেরা, টেলিফটো লেন্স এবং ট্রাইপড থাকলে চমৎকার ছবি পাওয়া সম্ভব। এছাড়া আধুনিক স্মার্টফোনেও নাইট মোড ব্যবহার করে ভালো মানের ছবি তোলা যাবে।
MAH – 12665, Signalbd.com