বিশ্ব

চীন-রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলায় ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এলেন ট্রাম্প

Advertisement

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিরক্ষামূলক কর্মসূচি ‘গোল্ডেন ডোম’ নিয়ে আসছেন, যার লক্ষ্য চীন ও রাশিয়ার সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি প্রতিহত করা। গত ২০ মে ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই উদ্যোগের ঘোষণা দেন।

গোল্ডেন ডোম: কী এবং কেন?

গোল্ডেন ডোম প্রকল্পটি একটি মহাকাশভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, যেখানে শত শত উপগ্রহের সমন্বয়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে। এই নেটওয়ার্ক দ্রুত ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত, অনুসরণ এবং প্রয়োজন পড়লে তা ধ্বংস করতে সক্ষম হবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে মোট খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১৭৫ বিলিয়ন ডলার (১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার)। ২০২৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে এটি কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে, অর্থাৎ তার প্রেসিডেন্ট পদমেয়াদের শেষ নাগাদ।

নেতৃত্বে স্পেস ফোর্সের জেনারেল

ট্রাম্প এই প্রকল্পের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন মাইকেল গেটলাইন নামে একজন ‘স্পেস ফোর্স’ জেনারেলকে, যিনি এই উচ্চাভিলাষী কর্মসূচির মূল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন দেখভাল করবেন। ট্রাম্প বলেন, ‘গোল্ডেন ডোম আমাদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করবে’।

রিগ্যানের স্টার ওয়ারসের স্মৃতি

ট্রাম্প তার ভাষণে উল্লেখ করেন, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান বহু বছর আগে এই ধরনের মহাকাশভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চেয়েছিলেন, যা ‘স্টার ওয়ারস’ নামে পরিচিত। তবে তখন প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অভাব ছিল। এখন প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে এটি সম্ভব হয়েছে।

কানাডার অংশগ্রহণ

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করছেন, যেখানে নোরাড (NORAD) ও গোল্ডেন ডোমসহ অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক উদ্যোগগুলোকে শক্তিশালী করার বিষয় রয়েছে। ট্রাম্প বলেন, কানাডাও এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী।

বাজেট ও সময়সীমার অনিশ্চয়তা

বিশেষজ্ঞরা এই প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমা নিয়ে আশাবাদী নন। কংগ্রেশনাল বাজেট অফিসের সাম্প্রতিক অনুমান অনুযায়ী, এই প্রকল্পের খরচ আগামী দুই দশকে ৮৩১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। অন্যদিকে, সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ টম কারাকো মনে করেন, প্রকৃত ব্যয় ও সময়সীমা নির্ভর করবে কিভাবে প্রযুক্তি এবং বিদ্যমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একত্রিত করা যায় তার উপর।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

গোল্ডেন ডোমের মতো মহাকাশভিত্তিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রযুক্তিগত দিক থেকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং এবং ব্যয়বহুল। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার দক্ষতা এবং সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলভাবে এই প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে আশা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য এই উদ্যোগ কেবল প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার অংশ নয়, এটি সামরিক আধিপত্য বজায় রাখার এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button