ঈদের ছুটিতে কাস্টম হাউসগুলো খোলা থাকবে

আসন্ন ঈদুল আজহার ছুটির সময়ে দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। এর ফলে সরকারি ছুটির দিনগুলোতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে চলমান থাকবে। তবে ঈদের দিন কাস্টম হাউসগুলোর সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে এ তথ্য জানিয়েছে।
নির্দেশনার বিস্তারিত
মঙ্গলবার (২০ মে ২০২৫) এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মুকিতুল হাসান (কাস্টম ও নীতি) স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়েছে, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে আগামী ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত (ঈদের দিন ব্যতীত) সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত কার্যক্রম সীমিত আকারে চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই নির্দেশনা দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এনবিআরের এই সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের জন্য স্বস্তির সংবাদ। বিশেষ করে, যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, মোংলা বন্দরসহ দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঈদুল আজহার ছুটির সময়সূচি
আগামী ৬ বা ৭ জুন বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে পারে, যা চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করছে। এ উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। এই ছুটির সময়ে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সীমিত থাকলেও কাস্টম হাউসগুলোর কার্যক্রম চালু রাখার সিদ্ধান্ত বাণিজ্য খাতে গতিশীলতা বজায় রাখবে।
কাস্টম হাউসের ভূমিকা ও গুরুত্ব
কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনগুলো দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। এসব প্রতিষ্ঠান শুল্ক আদায়, পণ্য পরিদর্শন, এবং বাণিজ্য নীতি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেনাপোল স্থলবন্দর, যা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান প্রবেশপথ, সেখানে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। এই বন্দরে ঈদের ছুটির সময়ে কার্যক্রম চালু রাখার সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ সুবিধা নিয়ে আসবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি আমদানি-রপ্তানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। পোশাক শিল্প, কৃষিপণ্য, চামড়া, এবং অন্যান্য খাতের পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি করা হয়। একই সঙ্গে, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, এবং ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়। তাই ছুটির সময়ে কাস্টম হাউসগুলোর কার্যক্রম সীমিত আকারে হলেও চালু রাখা বাণিজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো এনবিআরের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর একজন প্রতিনিধি বলেন, “ঈদের ছুটির সময়ে কাস্টম হাউস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য ইতিবাচক। এটি ব্যবসায়ীদের পণ্য সরবরাহে বিলম্ব এড়াতে সহায়তা করবে।” তিনি আরও বলেন, “ঈদের সময়ে বাজারে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ে। তাই কাস্টম হাউসের কার্যক্রম চালু রাখা বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করবে।”
বেনাপোল কাস্টম হাউসের একজন কর্মকর্তা জানান, ঈদের ছুটির সময়ে সীমিত জনবল নিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তবে জরুরি সেবা, যেমন পচনশীল পণ্যের ক্লিয়ারেন্স, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করা হবে। এতে করে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি কমবে এবং পণ্য সরবরাহে ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
অর্থনীতিবিদদের মতে, ঈদের ছুটির সময়ে কাস্টম হাউস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে শুল্ক আদায় অব্যাহত থাকবে, যা সরকারের রাজস্ব আয়ে অবদান রাখবে। এছাড়া, ব্যবসায়ীদের পণ্য সরবরাহে বিলম্ব কম হওয়ায় বাজারে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকবে।
একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি আমদানি-রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। তাই ছুটির সময়ে কাস্টম হাউসের কার্যক্রম চালু রাখা অর্থনীতির গতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।” তিনি আরও বলেন, “এটি ব্যবসায়ীদের আস্থা বাড়াবে এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
ঈদের ছুটির সময়ে কাস্টম হাউসগুলো সীমিত জনবল নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করবে, যা একটি চ্যালেঞ্জ। তবে এনবিআর জানিয়েছে, জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত জনবল মোতায়েন করা হবে। এছাড়া, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনেক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে, যা সময় ও শ্রম সাশ্রয় করবে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কাস্টম হাউসের কার্যক্রম দ্রুততর করতে আরও স্বচ্ছতা ও দক্ষতা প্রয়োজন। কাগজপত্র প্রক্রিয়াকরণে বিলম্ব এবং লজিস্টিক সমস্যা এখনও কিছু ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। এনবিআর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
উপসংহার
ঈদুল আজহার ছুটিতে কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এটি আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করবে এবং ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা সৃষ্টি করবে। তবে এই সিদ্ধান্তের সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করবে পর্যাপ্ত জনবল, স্বচ্ছ প্রক্রিয়া, এবং ডিজিটাল সেবার ওপর। সরকার ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।