বিশ্ব

গাজা যুদ্ধের অবসান চায় বেশিরভাগ ইসরাইলি সেনা: জরিপ

Advertisement

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান চায় ইসরাইলি সেনাদের একটি বড় অংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে উঠে এসেছে, নিয়মিত সেনাদের পাশাপাশি রিজার্ভ সেনারাও যুদ্ধ শেষ করে হামাসের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি দেখতে চান। এ জরিপটি ইসরাইলের আগাম ইনস্টিটিউট পরিচালনা করেছে।

জরিপের মূল তথ্য

জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৭৩ শতাংশ ইসরাইলি সেনা যুদ্ধ বন্ধ করে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পক্ষে মত দিয়েছেন। একই সঙ্গে দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ সেনা ইতোমধ্যেই গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হারিয়ে ফেলেছেন। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ৬৪ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করছেন চলমান যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক কারণে পরিচালিত হচ্ছে, যার সঙ্গে প্রকৃত নিরাপত্তা বা প্রতিরক্ষার খুব বেশি সম্পর্ক নেই।

যুদ্ধ

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতে গাজা উপত্যকা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কয়েক লাখ মানুষ হতাহত হয়েছেন, প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছেন। ইসরাইলের অবরোধে খাদ্য ও ওষুধের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জাতিসংঘ সম্প্রতি গাজায় দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দিয়েছে। অনাহারে এরই মধ্যে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

সাধারণ ইসরাইলিদের অবস্থান

শুধু সেনাদের মধ্যেই নয়, সাধারণ ইসরাইলিদের মধ্যেও যুদ্ধবিরতির দাবি জোরালো হচ্ছে। জরিপে দেখা গেছে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ইসরাইলি নাগরিক বিশ্বাস করেন যুদ্ধটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রায় ৭৪ শতাংশ সাধারণ মানুষও বন্দি বিনিময় ও সংঘাতের অবসানের পক্ষে মত দিয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির ভোটারদেরও একটি বড় অংশ যুদ্ধের সমাপ্তি চান। জরিপের ফলাফল বলছে, ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা বৃহত্তর বন্দি বিনিময়ের শর্তে যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত।

দেশে বিক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া

ইসরাইল জুড়ে বিভিন্ন শহরে যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে তেল আবিবসহ প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ সৃষ্টি করেন। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। অনেক স্থানে বিক্ষোভকারীরা সড়কের মাঝখানে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান।

বিক্ষোভকারীদের সংগঠন “হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম” জানিয়েছে, তাদের দাবি হচ্ছে দ্রুত বন্দিদের মুক্তি এবং যুদ্ধের অবসান। সংগঠনটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে তিনি আলোচনায় মধ্যস্থতা করে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করেন।

নেতানিয়াহু সরকারের সমালোচনা

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে ঘিরে ব্যাপক সমালোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। হামাসের হাতে আটক থাকা এক বন্দির মা আইনাভ জাঙ্গাউকার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “৬৯০ দিন ধরে সরকার কোনো সুস্পষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।” তার দাবি, নেতানিয়াহু জনগণের চাপকেই ভয় পান এবং নিজের রাজনৈতিক অবস্থান রক্ষার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

সেনাদের মনোবল ও রাজনৈতিক প্রভাব

জরিপের ফলাফলে স্পষ্ট হয়েছে, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় সেনাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। ৪০ শতাংশ সেনা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হারিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এ পরিস্থিতি নেতানিয়াহুর সরকারের জন্য বড় রাজনৈতিক সংকট ডেকে আনতে পারে। সেনা ও সাধারণ জনগণের বিরোধিতা বাড়তে থাকলে যুদ্ধ টিকিয়ে রাখা সরকারের জন্য ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠবে।

আন্তর্জাতিক মহলের অবস্থান

জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুদ্ধবিরতি ছাড়া উপত্যকার মানুষদের জীবন রক্ষা সম্ভব নয় বলে সতর্ক করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও ইসরাইলকে দ্রুত সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে চাপ দিচ্ছে।

জরিপের ফলাফল প্রমাণ করছে যে, শুধু আন্তর্জাতিক মহল বা ফিলিস্তিনিরা নয়, ইসরাইলের সেনারাও যুদ্ধের সমাপ্তি চান। প্রশ্ন হলো, সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কি এই দাবি মানতে বাধা দেবে? নাকি অভ্যন্তরীণ চাপ ও আন্তর্জাতিক চাপ মিলেই গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাবে? সময়ই এর উত্তর দেবে।

এম আর এম – ১০৪৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button