বিশ্ব

আরব আমিরাতের কাছে ১৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র সরকার সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) কাছে প্রায় ১৪০ কোটি মার্কিন ডলারের সমরাস্ত্র ও সামরিক যন্ত্রাংশ বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন মধ্যপ্রাচ্য সফরের প্রাক্কালে এই সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়েছে, যা কৌশলগতভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ও অংশীদারিত্ব আরও জোরদার হবে। এর ফলে উপসাগরীয় অঞ্চলে ইউএই’র সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং তারা মানবিক সহায়তা ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে।

কী কী অন্তর্ভুক্ত আছে এই চুক্তিতে?

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ অস্ত্র বিক্রির অনুমোদিত প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে—

  • ৬টি সিএইচ-৪৭এফ চিনুক হেলিকপ্টার
  • সংশ্লিষ্ট অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম
  • প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক সাপোর্ট

এই প্যাকেজের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ১৩২ কোটি মার্কিন ডলার, যার মধ্যে হেলিকপ্টার ছাড়াও বিভিন্ন প্রযুক্তি ও অপারেশনাল যন্ত্রপাতি অন্তর্ভুক্ত আছে।

এছাড়া, এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ বিক্রির জন্য আরও একটি ১৩ কোটি ডলারের চুক্তি অনুমোদনের পথে রয়েছে। এই যন্ত্রাংশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বর্তমান যুদ্ধবিমান বাহিনীকে আরও কার্যকর ও রক্ষণাবেক্ষণে সক্ষম করে তুলবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তি?

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, এই অস্ত্র সরবরাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক কার্যক্রমে সহায়ক হবে, বিশেষ করে—

  • অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন জরুরি সহায়তা
  • মানবিক মিশন
  • সন্ত্রাসবিরোধী অপারেশন

এই চুক্তি শুধু অস্ত্র বিক্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি যুক্তরাষ্ট্র-আমিরাত কৌশলগত অংশীদারিত্বের একটি বড় দৃষ্টান্ত।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ভাষায়, “এই বিক্রয় মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এবং আমিরাতকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে আরও সুসংহত করবে।”

মধ্যপ্রাচ্য সফরে ট্রাম্প: আরও কী আসছে?

চুক্তির এই ঘোষণা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্য সফরে সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত যাচ্ছেন। সফরে তিনি বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করবেন, যার মধ্যে রয়েছে:

  • গাজা সংকট
  • ইরান ইস্যু
  • জ্বালানি নিরাপত্তা ও বাণিজ্য
  • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিয়োগ

বিশ্লেষকদের মতে, এই সফরে প্রতিরক্ষা খাতে আরও বড় চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি জ্বালানি ও টেক খাতেও নতুন বিনিয়োগ এবং যৌথ উদ্যোগ চূড়ান্ত হতে পারে।

কংগ্রেসের অনুমোদন এখনো বাকি

যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী কংগ্রেসেরও এই চুক্তির ওপর আপত্তি জানানোর সুযোগ রয়েছে।

চুক্তি অনুমোদনের জন্য ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কংগ্রেসের কোনো সদস্য যদি চুক্তি বাতিল বা পরিবর্তনের জন্য আইনগত পদক্ষেপ নেন, তবে তা আলোচনার পর্যায়ে যেতে পারে।

কৌশলগত প্রতিক্রিয়া: কেন এখন এই অস্ত্র বিক্রি?

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই চুক্তি তিনটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে করা হয়েছে:

  1. মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রভাব ধরে রাখা
  2. ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলা
  3. আরব মিত্রদের সঙ্গে কৌশলগত বন্ধন জোরদার করা

ইউএই বিগত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সামরিক অংশীদার। আফগানিস্তান ও ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সামরিক মিশনে আরব আমিরাত সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে।

সমালোচনা ও উদ্বেগের জায়গা কোথায়?

যদিও চুক্তিকে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’-এর অংশ বলে দেখছেন, তবু কিছু মানবাধিকার সংগঠন ও মধ্যপ্রাচ্য পর্যবেক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, এমন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র সরবরাহ মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়াতে পারে এবং ভবিষ্যৎ সংঘর্ষে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগও বাড়তে পারে।

বিশেষ করে, গাজা যুদ্ধ ও ইয়েমেন সংকটের প্রেক্ষাপটে এই অস্ত্রগুলো কীভাবে ব্যবহৃত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে এই ১৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফরকে ঘিরে আরও চুক্তির ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি শুধুই সামরিক নয়—এটি একসঙ্গে অর্থনৈতিক, কৌশলগত ও রাজনৈতিক বার্তাও বহন করে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button