নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়কে শনিবার বিকেলে এক রোলস-রয়েস কোম্পানির বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকের ওপর উঠে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় গাড়ির চালক ও মালিকের ছেলে সহ মোট চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন মাস্কো গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ সবুরের ছেলে এবং মাস্কো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আহমেদ আরিফ বিল্লাহ। দুর্ঘটনার পর সবাইকে ঢাকা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার সময়ের বিবরণ
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, শনিবার বিকেল প্রায় ৪টার দিকে মাস্কো গ্রুপের এমডি আহমেদ আরিফ বিল্লাহ তাঁর ছেলে আহমেদ তাওয়াফ বিল্লাহ এবং তাঁর দুই বন্ধু রুম্মন হোসেন ও রোমান আহমেদকে নিয়ে রোলস-রয়েসের একটি বৈদ্যুতিক গাড়িতে ঢাকা যাওয়ার পথে পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়কের সুলফিনা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি সড়ক বিভাজকের ওপর উঠে গিয়ে সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
আহতদের পরিচয় ও অবস্থা
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তিরা হলেন:
- আহমেদ আরিফ বিল্লাহ (মালিকের ছেলে ও মাস্কো গ্রুপের এমডি)
- আহমেদ তাওয়াফ বিল্লাহ (আরিফের ছেলে)
- রুম্মন হোসেন (আরিফের বন্ধু)
- রোমান আহমেদ (আরিফের বন্ধু)
ওসি জানান, আহত চারজনকে দ্রুত ঢাকা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তাদের শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে জানা গেছে। তবে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।
গাড়ির মালিকানা ও গাড়ির বিবরণ
এই বিলাসবহুল রোলস-রয়েস গাড়িটির মালিক মাস্কো গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ সবুর। দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তাঁর ছেলে ও মাস্কো গ্রুপের এমডি আহমেদ আরিফ বিল্লাহ। গাড়িটি রোলস-রয়েসের বৈদ্যুতিক মডেল ‘স্পেক্টার’, যা বাংলাদেশের বাজারে অত্যন্ত দামী ও বিলাসবহুল একটি গাড়ি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রোলস-রয়েস ‘স্পেক্টার’ মডেলের এই গাড়িটির দাম সাধারণত ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত। শুল্ক ও অন্যান্য করের পর বাংলাদেশের বাজারে এর মোট খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার কাছাকাছি। এই গাড়ি সাধারণ গাড়ির থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্রযুক্তি ও বিলাসবহলের জন্য পরিচিত।
দুর্ঘটনার কারণ ও তদন্তের অবস্থা
রূপগঞ্জ থানার ওসি তরিকুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে প্রাথমিক তদন্ত চলছে। গাড়িটি কেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। তবে গাড়ির মালিক ও চালকের কাছ থেকে পুরো ঘটনা স্পষ্ট হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে, দুর্ঘটনার পর রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ির মালিক ও চালকের কাগজপত্র তল্লাশি চলছে এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশে রোলস-রয়েস গাড়ির অবস্থান ও জনপ্রিয়তা
গত দুই দশকে বাংলাদেশে রোলস-রয়েসের বিভিন্ন মডেল বাণিজ্যিকভাবে আমদানি করা হয়েছে। বিশেষ করে ‘স্পেক্টার’ মডেলটি বৈদ্যুতিক প্রযুক্তিতে তৈরি এবং বিলাসবহলের কারণে এটি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও উচ্চবিত্তদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মোট ১৪টি রোলস-রয়েস গাড়ি বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছে। এসব গাড়ি সাধারণত প্রধানত শীর্ষ পর্যায়ের শিল্প প্রতিষ্ঠান ও গাড়ি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দেশে আসে।
নারায়ণগঞ্জ পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়কের বর্তমান অবস্থা
নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়কটি রাজধানীর এক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এখানে যানজট ও যান চলাচল অনেক সময় ঘনিষ্ঠ হয়। এমন সড়কে উচ্চমূল্যের গাড়ি দ্রুত চালানো বা নিয়ন্ত্রণ হারানো অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, সড়কটির কিছু অংশের অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।
সড়ক নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
এই দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কড়াকড়ি ও সড়ক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত সড়কগুলোর আধুনিকায়ন, সড়ক বিভাজক ও নিরাপত্তা ব্যারিয়ার উন্নয়ন, পাশাপাশি যানবাহন চালকদের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপত্তা বিধান সুনিশ্চিত না হলে এই ধরনের দুর্ঘটনা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, পুলিশের টহল দল, ও সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে একযোগে কাজ করতে হবে।
রোলস-রয়েসের মতো অত্যন্ত মূল্যবান ও বিলাসবহুল গাড়ির দুর্ঘটনা দেশের জন্য একটি সতর্কবাণী হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা যায়। সড়ক নিরাপত্তা ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া এখন সময়ের দাবি। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি দ্রুত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য।



