সৌদি আরবের সঙ্গে ৩৫০ কোটি ডলারের অস্ত্রচুক্তি

যুক্তরাষ্ট্র সরকার সৌদি আরবের কাছে প্রায় ৩৫০ কোটি ডলারের আধুনিক ‘এআইএম-১২০’ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের ঠিক আগেই এই চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছে, এই অস্ত্রচুক্তি কংগ্রেসের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
এই চুক্তির আওতায় সৌদি আরব পাবে ১ হাজারের বেশি মধ্যপাল্লার ‘AIM-120 Advanced Medium-Range Air-to-Air Missile (AMRAAM)’ ক্ষেপণাস্ত্র, যা আধুনিক যুদ্ধবিমানে ব্যবহারযোগ্য এবং আকাশে থাকা শত্রু লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম।
মধ্যপ্রাচ্য সফরের আগেই কৌশলগত প্রস্তুতি
ট্রাম্প আগামী ১৩ থেকে ১৬ মে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন। তার আগে এই চুক্তিকে কৌশলগত বার্তা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষত ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে এটি প্রথম বড় আকারের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক অস্ত্রচুক্তি, যা শুধু সামরিক নয় বরং কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে রোম সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ট্রাম্পের সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু হয়। আর সৌদি সফর হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর প্রথম পূর্ণাঙ্গ কৌশলগত সফর।
কী আছে এই অস্ত্রচুক্তিতে?
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ‘এআইএম–১২০’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আধুনিক এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এগুলো রাডার গাইডেড, মিসাইল প্রতিরোধ ব্যবস্থা এড়িয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের F-15, F-16, F-18 সহ আধুনিক যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত হচ্ছে।
চুক্তির আওতায় শুধু ক্ষেপণাস্ত্র নয়, এতে সংযুক্ত থাকবে রক্ষণাবেক্ষণ, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তা। ফলে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সামরিক চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সৌদি আরবের কৌশলগত অবস্থান ও নিরাপত্তা চাহিদা
ইয়েমেন যুদ্ধ, ইরানের সাথে টানাপোড়েন, ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইস্যুর কারণে সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই উন্নত প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই সৌদি আরবের অন্যতম প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। এই নতুন চুক্তি দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তি?
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বজায় রাখার একটি বড় পদক্ষেপ। ইউক্রেন যুদ্ধ ও ইরান প্রশ্নে সৌদি আরব বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। রিয়াদ সাম্প্রতিক সময়ে কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও কাজ করছে, যা ওয়াশিংটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্পের ভিন্ন কূটনৈতিক বার্তা
প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে বহু আর্থিক ও সামরিক চুক্তি করেছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদেও সেই নীতিই তিনি বজায় রাখছেন। তবে এবার বিশ্ব পরিপ্রেক্ষিত বদলে গেছে। চীন, রাশিয়া ও ইরান—তিন দেশই মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানবাধিকার ইস্যু ও কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি
সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনা রয়েছে। বিশেষত সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মার্কিন কংগ্রেসে সৌদি আরবকে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে কঠোর অবস্থান রয়েছে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন বরাবরই তা পাশ কাটিয়ে গেছে, এবারও কংগ্রেসে এই চুক্তি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে।
অর্থনৈতিক দিক ও ট্রাম্পের বাণিজ্য কৌশল
এই অস্ত্রচুক্তি মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্যও বড় সাফল্য। এটি রে’থিয়ন (Raytheon) ও লকহিড মার্টিন (Lockheed Martin)–এর মতো কোম্পানির জন্য মিলিয়ন ডলার মূল্যের নতুন উৎপাদন চুক্তি বয়ে আনবে। এতে মার্কিন অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
এই অস্ত্রচুক্তি এবং সফরের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য কৌশল স্পষ্ট হলো। সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার লক্ষ্যেই এগোচ্ছে হোয়াইট হাউস। একদিকে তেলনির্ভরতা কমানোর দিকে নজর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, অন্যদিকে সামরিক দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে।
সংক্ষেপে মূল পয়েন্টসমূহ:
- যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের সঙ্গে ৩৫০ কোটি ডলারের ‘এআইএম-১২০’ ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি করেছে
- চুক্তিতে থাকবে ১ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ
- ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের আগেই এই চুক্তি
- ইউক্রেন যুদ্ধ ও ইরান ইস্যুতে সৌদি এখন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র
- চুক্তি কংগ্রেসে পাঠানো হয়েছে, মানবাধিকার প্রশ্নে আলোচনা হতে পারে