বন্ধ পাকিস্তানের আকাশ : ৬০০ মিলিয়ন ডলার বাড়তি খরচ এয়ার ইন্ডিয়ার

জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে, এবং পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারতও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পারস্পরিক নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া বছরে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত খরচের সম্মুখীন হচ্ছে। দীর্ঘতর ফ্লাইট রুট, বাড়তি জ্বালানি খরচ এবং যাত্রীদের উপর এর প্রভাব এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। আগামী ২৩ মে পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে জানা গেছে, যদিও আন্তর্জাতিক বিমানের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়।
পেহেলগাম হামলা ও আকাশসীমা বন্ধের পটভূমি
পেহেলগামে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। এই হামলার বিস্তারিত তথ্য এখনও পুরোপুরি প্রকাশিত না হলেও, এটি একটি উল্লেখযোগ্য সন্ত্রাসী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা দুই দেশের মধ্যে পূর্ব থেকে বিদ্যমান শত্রুতাকে আরও তীব্র করেছে। পাকিস্তান এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়। ভারতও পাকিস্তানি বিমানের জন্য একই পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যা দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচলকে পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে।
এই পদক্ষেপ ঐতিহাসিকভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ এর আগেও ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর পাকিস্তান ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করেছিল। সেই সময়ও এয়ার ইন্ডিয়াসহ ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলো উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। এবারের ঘটনা সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে, তবে এর প্রভাব আরও গভীর হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এয়ার ইন্ডিয়ার উপর আর্থিক ও পরিচালনাগত প্রভাব
পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ হওয়ায় এয়ার ইন্ডিয়াকে তাদের ফ্লাইট রুট পরিবর্তন করতে হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশে ভারত থেকে ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটগুলো এখন পাকিস্তানের উপর দিয়ে সরাসরি যাওয়ার পরিবর্তে দীর্ঘতর বিকল্প পথ ব্যবহার করছে। এই দীর্ঘ রুটের ফলে ফ্লাইটের সময় গড়ে ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা বেড়ে যাচ্ছে, যা জ্বালানি খরচ বাড়াচ্ছে।
এয়ার ইন্ডিয়ার প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এই বাড়তি খরচ বছরে ৫৯১ থেকে ৬০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এই খরচের মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত জ্বালানি, ক্রু সদস্যদের জন্য বাড়তি কাজের সময়, এবং বিমান রক্ষণাবেক্ষণের খরচ। এছাড়া, দীর্ঘ ফ্লাইট সময়ের কারণে বিমানের দৈনন্দিন ফ্লাইট সংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা আয়ের উপর আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিমান সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তারা ফ্লাইটের ভাড়া বাড়াতে বাধ্য হতে পারে। এটি যাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা হিসেবে দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে যারা নিয়মিত আন্তর্জাতিক ভ্রমণ করেন। এছাড়া, দীর্ঘ ফ্লাইট সময় যাত্রীদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা এয়ার ইন্ডিয়ার ব্র্যান্ড ইমেজের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে।