ইসরাইলের তেল আবিবের রাস্তায় এক অভূতপূর্ব গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গাজা যুদ্ধের অবসান এবং হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে প্রায় ৫ লাখ মানুষ রোববার সন্ধ্যায় (১৭ আগস্ট) তেল আবিবের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভে অংশ নেয়। সমাবেশকারীরা সরকারকে দ্রুত যুদ্ধবিরতির পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
তেল আবিবের রাস্তায় মানবস্রোত
রবিবার সন্ধ্যায় তেল আবিবের ‘জিম্মি স্কোয়ার’ ও আশপাশের রাস্তাগুলো মানুষের ঢলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরিবার-পরিজনকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে তারা একসঙ্গে স্লোগান দেন। আয়োজক সংগঠন জানায়, ইসরাইলের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বিক্ষোভে অংশ নিতে ছুটে আসেন।
জিম্মি ও নিখোঁজ পরিবার ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন ও সাধারণ নাগরিকরা। দেশব্যাপী ধর্মঘট ও সড়ক অবরোধের পর এই বিক্ষোভ নতুন মাত্রা যোগ করে।
পরিবারগুলোর হৃদয়বিদারক বক্তব্য
সমাবেশে জিম্মিদের পরিবার-পরিজনেরা মঞ্চে উঠে বক্তব্য দেন। রম ব্রাসলভস্কি নামে এক জিম্মির বাবা বলেন, “দুই সপ্তাহ আগে আমরা জানতে পেরেছি রম এখনো জীবিত। কিন্তু সে ক্ষুধার্ত, নির্যাতিত এবং ভীত। এই যুদ্ধ থামাতে হবে।”
অন্যদিকে জিম্মি মাতান জাংগাউকের মা আইনাভ জাংগাউক জানান, “আমার সন্তানের জন্য হৃদয় পুড়ছে। সমন্বিত ও তাৎক্ষণিক চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান চাই। আমাদের সন্তানরা ফেরত না আসা পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।”
দেশের ভেতরে ধর্মঘট ও প্রতিবাদ
এই বিক্ষোভের একদিন আগে দেশজুড়ে ব্যাপক ধর্মঘট পালিত হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও অফিস বন্ধ রাখা হয়। বিভিন্ন শহরে সড়ক অবরোধ করে সাধারণ মানুষ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
প্রতিবাদকারীদের দাবি, সরকার যদি দ্রুত সমাধান না আনে, তবে তারা আরও কঠোর কর্মসূচিতে নামবে। জিম্মি পরিবারের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, আন্দোলন চলবে আরও জোরদারভাবে।
গাজার পরিস্থিতি ও হামাসের প্রতিক্রিয়া
অন্যদিকে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গাজা সিটি থেকে বাসিন্দাদের দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে নেওয়ার ইসরাইলি পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছে। হামাসের দাবি, এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে তা নতুন এক গণহত্যার জন্ম দেবে এবং হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে।
হামাস আরও জানায়, ইসরাইলের যুদ্ধনীতির কারণে গাজার সাধারণ মানুষ চরম মানবিক সংকটে পড়েছে। পানি, বিদ্যুৎ ও খাদ্য ঘাটতির কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ
তেল আবিবের বিক্ষোভ শুধু দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও সাড়া ফেলেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এটিকে ইসরাইলের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ গণসমাবেশ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণ মানুষের চাপ ক্রমেই সরকারের ওপর বাড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাইলকে জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নতুন উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরাইলি সমাজ এখন গভীর বিভক্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে সরকার সামরিক অভিযানের মাধ্যমে হামাসকে দুর্বল করতে চায়, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুত সমাধান খুঁজছে।
একজন মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, “এই বিক্ষোভ দেখিয়ে দিলো মানুষ আর যুদ্ধ চায় না। সরকারকে জনগণের চাপের মুখে কূটনৈতিক সমাধানের পথে হাঁটতে হতে পারে।”
সমাপ্তি
তেল আবিবের এই গণসমাবেশ প্রমাণ করেছে, যুদ্ধবিরতির দাবি এখন আর শুধু সীমিত গোষ্ঠীর নয়, বরং ইসরাইলি সমাজের প্রধান উদ্বেগে পরিণত হয়েছে। পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনকে ফেরত চাইছে, আর সাধারণ মানুষ শান্তি ফিরে পেতে চায়। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়, সরকার এই জনচাপের কাছে নতি স্বীকার করবে কি না এবং গাজার চলমান যুদ্ধ কবে শেষ হবে।
এম আর এম – ০৯২০, Signalbd.com



