মহসিন নাকভি’র নেতৃত্বে এসিসি, ভারতের বয়কট

এ বছর সাপেক্ষে আলোচ্য হচ্ছে ক্রিকেটের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ দ্বৈর্ব্যবহার: ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। এশিয়া কাপ ২০২৫–এ খেলতে না চাওয়ার খবরই শোনা গেল, তবে এই বায়পাসে একটু অন্যরকম কারণ দেখানো হচ্ছে—প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা বিক্রির টিকিটের প্রতি পাঁচ মিনিটে কাঁপা, ক্রিকেটভক্তদের হাজারো অনুরোধ উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় বোর্ড! আসলে কেন, কী কারণে ভারত এশিয়া কাপ ও মহিলা ইমার্জিং এশিয়া কাপ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে? চলুন বিশ্লেষণ করি:
১. পটভূমি: রাজনীতি-ক্রিকেটের অখণ্ড সংযোগ
ভারত ও পাকিস্তান—দু’দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রায়ই ক্রীড়াঙ্গনে ঢুকে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে পাহালগাম–কাশ্মীর-এ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ভারত ‘অপারেশন সিনদুর’ পরিচালনা করলে দুই দেশের সীমান্ত থাকবে সস্পর্ক আরও শীতল হয়ে ওঠে। এ তীব্র দ্বন্দ্বের মাঝেই ক্রিকেট ফোকাস, যেখানে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও মাঠে উত্তেজনা কমেনি ।
তবে ক্রীড়া নিজে যে “রাজনীতির বিকল্প” বলে আমিশেলও হয়, তা আজ প্রশ্নের মুখে—যখন দুই দেশই ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বাজার হিসাবে সেই ‘মাঠ’ রাখতে চায়।
২. মহসিন নাকভি: ফুটবল নয়, ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ!
আগে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (ACC) বসতেন শ্রীলঙ্কার শাম্মি সিলভার। এপ্রিলে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি সভাপতি নির্বাচিত হলে বিষয়টি আরও রাজনৈতিক রূপ নেয় ।
নাকভি কি শুধু ক্রিকেটপ্রেমী? না, তিনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সরকার ও ক্রিকেট বোর্ড—দু’দিকেই তাঁর পোস্ট। ফলে ভারতীয় বোর্ডের কাছে “এসিসি = পাকিস্তান সরকার” এই বইমের দাঁড়ায়।
৩. ভারতীয় বয়কটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই–এর সূত্র ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, BCCI এশিয়া কাপ–সহ সকল ACC আয়োজিত টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়ানোর মৌখিক সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ।
- মহিলা ইমার্জিং এশিয়া কাপ (জুন, শ্রীলঙ্কা)
- মেন্স এশিয়া কাপ (সেপ্টেম্বর, ভারত)
উভয় থেকেই ভারত দলকে “উত্তোলনহীন” হিসেবে স্থগিত রাখা হবে, তাঁরা জানিয়েছেন। তবে আনুষ্ঠানিকপত্র এখনও ACC–তে পাঠানো হয়নি, মৌখিক যোগাযোগের মধ্যেই ইঙ্গিত দিল BCCI।
৪. কেন এই সিদ্ধান্ত? BCCI–এর যুক্তি
BCCI–এর অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে:
“আমরা এমন কোনো টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারি না, যার আয়োজক এসিসি এবং এর প্রধান একজন পাকিস্তানি মন্ত্রী। এ পরিস্থিতি জাতীয় আবেগেরও সঙ্গে জড়িত। আমরা ভারতের সরকারকে নিয়মিত জানাচ্ছি।”
অর্থাৎ, ক্রিকেট বোর্ড নয়—“দেশের আবেগ” প্রাধান্য পাচ্ছে। রাজনীতিকে ক্রীড়া থেকে আলাদা রাখার আইডিয়াল ভেঙে গেল এই সিদ্ধান্তে।
৫. এশিয়া কাপে ভারতের অনুপস্থিতি: কী পরিবর্তন আসে?
- প্রতিযোগিতার আকর্ষণ
- ইদানীং এশিয়া কাপ ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম দল ভারত। তাদের অনুপস্থিতিতে ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহ কমে যাবে—বিশেষত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ভক্তরা এখন খুঁজতে হবে ‘নতুন তারকা’।
- হোস্ট দেশ পরিবর্তন
- ছেলেদের টুর্নামেন্ট ভারতের কোনো শহরে হবে না। সম্ভাব্য বিকল্প: শ্রীলঙ্কা বা সংযুক্ত আরব আমিরাত—খড়কুটোর মতো খুঁজে নিতে পারে আয়োজকরা।
- টিকিট-ট্রেড
- ছয় বছর ধরে টিকিট বিক্রি করে আসা SRO–তে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকার ট্র্যযিক, উঠে যাবে বাতিল–নিষ্ক্রিয় বিল!
- প্রকাশিত সম্প্রচারস্বত্ব
- ACC সম্প্রচারস্বত্ব ১৭ কোটি ডলার (প্রায় ২০৭১ কোটি টাকা) সনি স্পোর্টস নেটওয়ার্ককে হস্তান্তর করেছে। ভারতের বাজার না থাকলে চুক্তি নবায়ন প্রশ্নবিদ্ধ হবে—“আয়োজক পাবেন না চাওয়া ভিউয়ারশিপ” ।
৬. ACC–এর আর্থিক প্রভাব
- অনুমান: সনি স্পোর্টস যদি ‘ইন্ডিয়ান ভিউয়ারশিপ’ ছাড়া টুর্নামেন্ট সম্প্রচার করে, তারা অর্থ প্রদান কমানোর দাবি করতে পারে।
- রাজস্ব ভাগ: ACC–র ৭৫% রাজস্ব পাঁচ স্থায়ী সদস্য—বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান—এর মধ্যে সমবণ্টন হয়। ভারতের অনুপস্থিতিতে অন্যরা ক্ষতিপূরণ পাবে না।
- খরচ বৃদ্ধি: আনুষ্ঠানিক পকেট থেকে আয়োজনা কমিটিতে পাঠাতে হয় ৩.৮০ কোটি ডলার (৪৬৩ কোটি টাকা)। বায়োপিক হবে আয়োজকদের জন্য ‘বোনাস নয়, বোঝা’ ।
৭. পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ও সমন্বয়
পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি এখনও তার পদে আছেন। ভারতী বয়কটের খবরের পর তিনি আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেননি, তবে পাকিস্তান গণমাধ্যমে যোগাযোগ করায় “ক্রিকেট ও রাজনীতি পৃথক” বলার চেষ্টা করেছেন। আন্তর্জাতিক আদালতে ACC–এর পক্ষে দাঁড়াতে পারেন তিনি, তবে ইতিমধ্যেই ভারতের ‘রোখা মাথা’ ভেঙে পড়েছে।
৮. ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট: রাজনীতি বনাম ক্রীড়া
- ICC–র মধ্যস্থতা: আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিষদ (ICC) দুই দেশের দ্বন্দ্বে প্রভাবিত—’২৩ এশিয়া কাপেও ভারত ম্যাচ খেলেছিল শ্রীলঙ্কায়, ‘হাইব্রিড মডেল’ নামে পরিচিত। এ পদ্ধতি কি এ বারের জন্য কার্যকর হবে? Reuters
- বৈদেশিক ফ্রি–নিউট্রাল ভেন্যু: ইউরোস বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো ভেন্যুতে ‘নিউট্রাল’ ম্যাচ আয়োজনের পরিকল্পনা। এতে ভারতীয়-সমর্থিত দর্শক কম, তবে রাজনীতি দূরে রাখা যেতে পারে।
- অবশ্যিক সমঝোতা: ভারত যদি “পরিস্থিতি বিবেচনা করে” আবার এসিসিতে যোগ দিতে চায়, তাহলে নাকভি পদত্যাগের সম্ভাবনা আছে কি? বিসিসিআই সূত্রে বলা হয় এখনও স্পষ্ট নয়।
ক্রীড়া যখন বিনোদন ও জাতীয় গর্বের উৎস, তখনও রাজনীতির ছায়া এড়ানো দায় হয়ে ওঠে। এশিয়া কাপ ২০২৫–এর অধিগম্য ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত—ভারতীয় দল না থাকায় টুর্নামেন্টের জনপ্রিয়তা এবে নিচে নেমে যেতে পারে, ব্যয়ভার, প্রতিযোগিতার গুণমান ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের আলোচনায় বঞ্চিত হবে অগণন ক্রিকেটপ্রেমী। তবে একবার মাঠে পা রাখলেই খেলাটি রাজনীতির ঊর্ধ্বে—শুধু তাতে পৌঁছনো কঠিন হলেও না বলা ভালো নয়।