বিশ্ব

আগামী শনিবার ঢাকার সড়কে ‘মার্চ ফর গাজা’

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান মানবিক সংকট ও সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ শিরোনামে ঢাকার রাজপথে এক বিশাল প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ নামের একটি নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। আগামী ১২ এপ্রিল, শনিবার, এই সংগঠনটি শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত একটি বিশাল মিছিল আয়োজন করতে যাচ্ছে, যা আয়োজকদের ভাষায় ঢাকায় ফিলিস্তিনের পক্ষে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় সংহতি মিছিল হতে চলেছে।

সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে আহ্বান

আয়োজকরা জানিয়েছেন, এই কর্মসূচিতে দল-মত-নির্বিশেষে সকল নাগরিককে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত বার্তায় বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনে চলমান হত্যাযজ্ঞ ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য এটি একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী বার্তা হিসেবে কাজ করবে। কর্মসূচিটি শনিবার দুপুর ৩টায় শুরু হওয়ার কথা।

সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া

‘মার্চ ফর গাজা’-র ফেসবুক ইভেন্টে অংশগ্রহণের আগ্রহ ইতিমধ্যেই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ইভেন্টটিতে ৬৪ হাজার মানুষ ‘আগ্রহী’ হয়েছেন এবং প্রায় ৫ হাজার মানুষ সরাসরি অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। এই সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে, যা আয়োজকদের মতে একটি জনসচেতনতা ও সাম্যবাদী আন্দোলনের প্রতিফলন।

পরিচিত ব্যক্তিত্বদের সক্রিয় সমর্থন

এই কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের বহু প্রতিষ্ঠিত আলেম, খেলোয়াড়, সমাজকর্মী ও সেলিব্রেটি ইতিমধ্যে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন—

  • মাহমুদুর রহমান, দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক
  • মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম ও নাহিদ রানা, জাতীয় দলের ক্রিকেটার
  • মিজানুর রহমান আজহারী, আলোচিত ইসলামি বক্তা
  • শায়খ আহমাদুল্লাহ, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান
  • মাওলানা মামুনুল হক, আমির, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
  • মজিবুর রহমান মঞ্জু, চেয়ারম্যান, এবি পার্টি
  • রেজাউল করীম আবরার, ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ
  • হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক, জাতীয় নাগরিক পার্টি (দক্ষিণাঞ্চল)
  • জাহিদুল ইসলাম ও মো. আবু সাদিক কায়েম, ইসলামী ছাত্রশিবির
  • আয়মান সাদিক, প্রতিষ্ঠাতা, টেন মিনিট স্কুল
  • তামিম মৃধা, অভিনেতা

তাদের ভিডিও বার্তাগুলো প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজসহ নিজ নিজ সামাজিক মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।

নেতৃস্থানীয়দের বার্তা

ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “১২ এপ্রিল, ইনশা আল্লাহ, আমি নিজে সশরীরে এই বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত থাকব। আপনারাও দলে দলে এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করুন। ফিলিস্তিন আমাদের ভাই-বোনদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে, আমাদের এই সময় এক হয়ে দাঁড়াবার সময়।”

এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁর ফেসবুক পেজে ১৪টি ভিডিও বার্তা একত্রে পোস্ট করে লিখেছেন, “আগামী শনিবার (১২ এপ্রিল) ফিলিস্তিনের জন্য সবচেয়ে বড় মার্চ হবে ঢাকার রাজপথে। স্লোগানে-মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠবে শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ।”

রাজনৈতিক সংহতি

এই মিছিলে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও কিছু সমর্থন এসেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ একটি ফটোকার্ডে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এতে রাজনৈতিকভাবে বহুমাত্রিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বানও স্পষ্ট।

আয়োজকদের প্রস্তুতি ও বার্তা

প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের একজন সংগঠক জানিয়েছেন, “এই মিছিল কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত নয়। এটি একটি মানবিক ও নৈতিক প্রতিবাদ। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশি জনগণ সর্বদা নিপীড়িত জাতির পাশে দাঁড়িয়েছে এবং এবারও ব্যতিক্রম হবে না।”

সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় অনুমতির ভিত্তিতে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশের ভূমিকা

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিকভাবে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতারা গাজার অবরোধ, বিমান হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশে এই কর্মসূচি তারই এক প্রতিফলন।

বিশ্লেষকদের মতে, এমন জনসমাবেশ দেশের নাগরিক সমাজের জাগ্রত বিবেকের পরিচয় বহন করে। তারা বলছেন, এই ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি আন্তর্জাতিক মহলেও বার্তা পৌঁছে দিতে পারে যে, মানবতার পক্ষে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ দাঁড়াতে প্রস্তুত।

শেষ কথা

১২ এপ্রিলের এই ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি শুধু একটি প্রতিবাদ নয়, বরং এটি হতে যাচ্ছে একটি মানবিক ঐক্যের প্রতীক। শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত এই পদযাত্রা একটি বার্তা দেবে—বাংলাদেশের মানুষ দাঁড়ায় নিপীড়িতের পাশে, জাতি-ধর্ম-রাজনীতির সীমার বাইরে গিয়েও।

আয়োজকেরা আহ্বান জানিয়েছেন, সকল ধর্ম-বর্ণ-পেশার মানুষ যেন এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে মানবিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দেন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button