ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ

শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) ওপর সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক সংস্থা কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) ইউএসসিআইআরএফ-এর প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে সংখ্যালঘুরা ক্রমবর্ধমান অমানবিক আচরণের শিকার হচ্ছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) গত বছরের নির্বাচনী প্রচারণার সময় মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য বক্তব্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছিল। গত বছরের এপ্রিলে নরেন্দ্র মোদি এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘মুসলমানরা বেশি বেশি সন্তান’ নেন এবং তাদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে অভিহিত করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও বৈষম্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটিতে ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ইউএসসিআইআরএফ ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার সুপারিশ করেছে।
শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানের অভিযোগ
২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ভারতকে অভিযুক্ত করেছে ওয়াশিংটন ও অটোয়া। এর ফলে উত্তর আমেরিকার দেশ দুটির সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কেও শীতলতা বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ভারত সরকার এবং তার গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এই হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিবেদনে বিশেষভাবে র-এর সাবেক কর্মকর্তা বিকাশ যাদবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং তার ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়েছে।
ভিয়েতনামকেও বিশেষ নজরদারির তালিকায় যুক্ত করার প্রস্তাব
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কমিউনিস্ট শাসিত ভিয়েতনাম ধর্মীয় বিষয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে, যার ফলে দেশটিকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে চীনের সঙ্গে অভিন্ন উদ্বেগের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে।
দিল্লির প্রতিক্রিয়া
ইউএসসিআইআরএফ-এর প্রতিবেদনের বিষয়ে বুধবার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়ালের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’’ ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এই সুপারিশকে রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত ও বাস্তবতাবর্জিত বলে অভিহিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ওপর তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে এখন পর্যন্ত মার্কিন প্রশাসন এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানায়নি।