বিশ্ব

মোদি–জমানায় ভারতে ইফতারের রাজনীতি আজ ডুমুরের ফুল

ভারতীয় সংসদ ভবনের অলিন্দে জোর ফিসফিসানি। রাষ্ট্রপতি কি রমজান মাসে সংসদ সদস্যদের প্রাতরাশে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আর কোনো সময়ের সন্ধান পেলেন না? প্রশ্ন আছে, উত্তর নেই। রাষ্ট্রপতি (নারী এবং আদিবাসী) সরাসরি প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানোর মতো অশোভন হতে কেউ চান না। তাই নিভৃত আলোচনা, অনুচ্চে।

রমজান মাসে সংসদ সদস্যদের প্রাতরাশের আমন্ত্রণ জানানো হলে, তা রাজনৈতিকভাবে অনেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠবে। বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে রমজান মাস শুরুর ঢের আগে, তাই রাষ্ট্রপতি মুর্মুর এই আমন্ত্রণের প্রয়োজন ছিল কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

মুসলমান প্রতিনিধিদের সংখ্যা

ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভার সম্মিলিত মুসলমান জনপ্রতিনিধির সংখ্যা ৪২। লোকসভায় শাসকদল বিজেপিতে একজনও মুসলমান নেই। রাজ্যসভায় ২৫০ জনের মধ্যে মুসলমান মাত্র ১৮ জন। এই পরিস্থিতিতে, মুসলমান প্রতিনিধিদের জন্য রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণের গুরুত্ব অনেক।

ইফতারের ঐতিহ্য

ভারতে স্বাধীনতার পর নেহরু ও পরে কংগ্রেসের অন্যান্য নেতারা ইফতারের আয়োজন করে আসছিলেন। এটি ছিল ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও পরধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতার প্রতীক। কিন্তু মোদি সরকারের আমলে এই ঐতিহ্য ভেঙে গেছে। ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ জানিয়ে দেন, তিনি ধর্মানুষ্ঠানের আয়োজনের পক্ষপাতী নন।

রাজনৈতিক পরিবর্তন

মোদি সরকারের আমলে রাজনৈতিক মেরুকরণ তীব্র হয়েছে। নির্বাচনে ৮০ বনাম ২০–এর লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। বিরোধীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, ফলে ইফতারের রাজনীতির কোনো প্রয়োজনই মোদি উপলব্ধি করেন না।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ওয়াক্‌ফ বিল পাস হলে মুসলিম ধর্মাচরণেও সংখ্যাগুরুর আধিপত্য বিস্তার হবে। একদিন না একদিন সারা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হয়ে যাবে।

রাষ্ট্রপতি ভবনে সংসদ সদস্যদের প্রাতরাশের আমন্ত্রণ জানানো শাসকদলের আদর্শ ও রাজনীতির পল্লবিত হওয়ার প্রমাণ কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মোদি সরকারের আমলে ইফতারের রাজনীতি আজ ডুমুরের ফুল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button