ভারতের কৃষক আন্দোলন: বুলডোজার দিয়ে কৃষকদের তাঁবু গুঁড়িয়ে দিল পুলিশ

ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে আন্দোলনরত কৃষকদের অস্থায়ী তাঁবু বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় কয়েক শ কৃষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফসলের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে এক বছরের বেশি সময় ধরে কৃষকেরা আন্দোলন করে আসছেন।
আন্দোলনের পটভূমি
পার্শ্ববর্তী হরিয়ানা রাজ্যের সীমানার কাছাকাছি এলাকায় পাঞ্জাবের কৃষকেরা গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁবু খাঁটিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। রাজধানী নয়াদিল্লি অভিমুখে কৃষকদের মার্চ নিরাপত্তা বাহিনী আটকে দিলে তাঁরা এই কর্মসূচি শুরু করেন। তাঁদের দাবির মধ্যে রয়েছে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি), কৃষিঋণ মওকুফ, পেনশনের ব্যবস্থা এবং বিদ্যুতের বিল না বাড়ানোর মতো বিষয়।
বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ
টেলিভিশনের খবরে দেখা যায়, অবস্থান কর্মসূচির স্থলের তাঁবু ও মঞ্চ গুঁড়িয়ে দিতে বুলডোজার ব্যবহার করছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের ঘেরাওয়ের মধ্যে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে কৃষকদের বাসের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কয়েক শ কৃষককে আটক করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে কৃষক নেতা জগজিৎ সিংহ দাল্লেওয়াল ও সারওয়ান সিং পান্ধেরও রয়েছেন।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের মুখপাত্র রাকেশ টিকায়েত বলেন, “একদিকে কৃষক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার, আর অন্যদিকে কৃষকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।” পাঞ্জাবের ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি এই উচ্ছেদ অভিযান অনুমোদন দিয়েছে, যদিও দলটি বলেছে, তারা কৃষকদের দাবির পক্ষে রয়েছে। কৃষকদের উদ্দেশে পাঞ্জাব আম আদমি পার্টির সহসভাপতি তরুণপ্রীত সিং বলেন, “আসুন, একসঙ্গে মিলে পাঞ্জাবের স্বার্থ নিশ্চিত করি।”
পুলিশের বক্তব্য
জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা নানক সিং বলেন, “বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে কোনো ধরনের শক্তি প্রয়োগ করা হয়নি।” তিনি আরও দাবি করেন, কৃষকেরা তাঁদের ভালোভাবে সহযোগিতা করেছেন এবং নিজেরাই বাসে গিয়ে বসেন।
পূর্ববর্তী আন্দোলন
উল্লেখ্য, দিল্লির বাইরে অবস্থান গেড়ে কৃষকেরা বছরব্যাপী আন্দোলন চালানোর পর ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার তাঁদের আনা বেশ কয়েকটি কৃষি আইন বদলাতে বাধ্য হয়েছিল।
ভারতের কৃষক আন্দোলন আবারও নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। কৃষকদের ন্যায্য দাবির প্রতি সরকারের মনোভাব এবং পুলিশি পদক্ষেপের ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। কৃষকদের আন্দোলন দেশের কৃষি নীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।