পাকিস্তানে যাত্রীবাহী ট্রেনে হামলা, ৬ সেনা নিহত

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। এ ঘটনায় অন্তত ছয় সামরিক সদস্য নিহত হয়েছে এবং ট্রেনে থাকা বহু যাত্রী আহত হয়েছে। সন্ত্রাসীরা ট্রেনের বেশ কয়েকজন যাত্রী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জিম্মি করেছে বলে জানা গেছে।
হামলার বিস্তারিত
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) পাকিস্তানের কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা ট্রেন থামিয়ে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে সামরিক বাহিনীর অন্তত ছয়জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরও বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। হামলার পর ট্রেনের চালকসহ অনেক যাত্রী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
বেলুচিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং জানান, হামলাকারীরা ট্রেনের শতাধিক যাত্রীকে জিম্মি করেছে। তারা হুমকি দিয়েছে যে, যদি কোনো সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হয়, তবে তারা সকল জিম্মিকে হত্যা করবে।
হামলার দায় স্বীকার
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই হামলা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়েছে। বিএলএ দীর্ঘদিন ধরে বেলুচিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে আসছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রতিক্রিয়া
হামলার পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। তবে জিম্মিদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তারা এখনো বড় ধরনের কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং যাত্রীদের নিরাপদে উদ্ধারের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হবে।
বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন
বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ হলেও এটি দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলের স্বাধীনতার দাবিতে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বিএলএ ছাড়াও আরও কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এখানে সক্রিয় রয়েছে।
বেলুচ বিদ্রোহীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, পাকিস্তান সরকার তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার না করে কেন্দ্রের স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে এবং তাদের অধিকার হরণ করছে। এই কারণে তারা বিভিন্ন সময়ে সামরিক বাহিনী, সরকারি স্থাপনা এবং যাত্রীবাহী ট্রেনকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই হামলার পর আন্তর্জাতিক মহল থেকে নিন্দার ঝড় উঠেছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন হামলাটিকে বর্বরোচিত আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে।
উদ্ধার অভিযান চলছে
বর্তমানে সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিশেষ ইউনিট ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে এবং উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। তবে সন্ত্রাসীদের অবস্থানের ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো তথ্য না থাকায় অভিযান পরিচালনায় বেগ পেতে হচ্ছে। সেনাবাহিনী বলছে, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
উপসংহার
এই হামলা পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। যাত্রীদের নিরাপদে উদ্ধারের পাশাপাশি পাকিস্তান সরকার কীভাবে এই হামলার প্রতিক্রিয়া জানাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেলুচিস্তানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সংলাপ ও কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া জরুরি, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।