রাশিয়ার ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলতে প্রস্তাব তৈরির নির্দেশ দিয়েছে হোয়াইট হাউস

যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিলের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন মস্কোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নিচ্ছে। মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা ও বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরেক সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞা শিথিলের পরিকল্পনা
সূত্রগুলো জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে যে, তারা যেন রাশিয়ার নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিলের সম্ভাব্য তালিকা প্রস্তুত করে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো দুই দেশের মধ্যে বড় পরিসরে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা।
নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেতে যাওয়া সম্ভাব্য রুশ নাগরিকদের তালিকায় দেশটির কিছু বিত্তশালী ব্যবসায়ী বা ‘অলিগার্ক’রাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। যদিও এই তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে এটি ট্রাম্প প্রশাসনের রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সদিচ্ছার প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।
কী চায় যুক্তরাষ্ট্র?
ওয়াশিংটন মস্কোর কাছ থেকে কী সুবিধা নিতে চাইবে, তা স্পষ্ট নয়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন পূর্বে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে, রাশিয়া যদি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আন্তরিকতা না দেখায়, তাহলে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের সম্ভাবনার কথা স্বীকার করেছেন।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “রাশিয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হাত থেকে মুক্তি পেতে পারে। তবে এটি নির্ভর করছে তারা আলোচনায় কী ধরনের মনোভাব দেখাবে তার ওপর।”
রাশিয়ার অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও আগ্রহ
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর নিষেধাজ্ঞার মাত্রা আরও বাড়ানো হয়। এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার অর্থনীতি চাপে পড়ে এবং দেশটি বিকল্প অর্থনৈতিক মডেল অনুসরণ করতে বাধ্য হয়।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা পুনরায় শুরু করতে চায়। দেশটির বিরল খনিজ সম্পদের ব্যাপক মজুত রয়েছে এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে যৌথ চুক্তির মাধ্যমে তা কাজে লাগানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে মস্কো।
ট্রাম্প-জেলেনস্কির উত্তপ্ত বৈঠক
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনের সঙ্গে খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তির চেষ্টা করছিল। তবে ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্কের পর সে চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন কৌশল বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কের গতিপথ এখন পুরোপুরি নির্ভর করছে এই আলোচনার ফলাফলের ওপর।