গঙ্গা চুক্তি পর্যালোচনার বৈঠকে কলকাতা যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা

বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) ৮৬তম বৈঠকে অংশ নিতে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল কলকাতা ও ফারাক্কা সফরে যাচ্ছে। গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি পর্যালোচনার লক্ষ্যে ৩ থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব
প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেন। তাঁর সঙ্গে থাকবেন আরও ১০ জন বিশেষজ্ঞ ও সরকারি কর্মকর্তা। ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এই বৈঠকের বিষয়ে অবহিত করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে বলেছে।
গঙ্গা চুক্তি ও এর মেয়াদ
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ১৯৯৬ সালে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তির মেয়াদ ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা আগামী বছর শেষ হতে চলেছে।
চুক্তি নবায়নের প্রয়োজনীয়তা
২০২৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছিলেন, চুক্তির নবায়ন নিয়ে দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা পর্যালোচনা করতে রাজি হয়েছেন। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে দুই দেশের সম্পর্কের নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, যা এই বৈঠকের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
তিস্তা চুক্তির অমীমাংসিত অবস্থা
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি কার্যকর হয়েছে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে কেন্দ্রীয় সরকার চুক্তি চূড়ান্ত করতে পারেনি। ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে লেখা এক চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, গঙ্গা চুক্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গকে উপেক্ষা করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, ২০২৩ সালেই পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার রাজ্যের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৈঠকের সময়সূচি
কেন্দ্রীয় সরকারের বার্তা অনুযায়ী, ৩ মার্চ বেলা পৌনে ১১টায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল কলকাতা পৌঁছাবে। সেদিন দুপুরে তাঁরা ট্রেনে চড়ে ফারাক্কায় যাবেন এবং ৪ মার্চ গঙ্গা নদীর আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করবেন।
৫ মার্চ তাঁরা কলকাতায় ফিরে আসবেন এবং ৬ মার্চ হায়াৎ রিজেন্সি হোটেলে ৮৬তম যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে যোগ দেবেন। ৭ মার্চ সেখানে দুই দেশের প্রযুক্তিবিদ পর্যায়ের (টেকনিক্যাল লেভেল) বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
৮ মার্চ সফর শেষে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা দেশে ফিরে যাবেন।
সার্বিক গুরুত্ব
গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের আলোচনার পাশাপাশি এই বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়েও আলোচনা হতে পারে। দুই দেশের মধ্যে জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের লক্ষ্যে এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।