পেরুর ফুড কোর্টের ছাদ ধসে নিহত ৩, আহত ৭৪

পেরুর উত্তরাঞ্চলের একটি ব্যস্ত শপিং সেন্টারের ফুড কোর্টের ছাদ ধসে অন্তত তিনজন নিহত এবং প্রায় ৭৪ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় দেশটির রিয়াল প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার বিবরণ
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছাদ ধসের সময় শপিং মলের ফুড কোর্টে অনেক পরিবার অবস্থান করছিল। ফায়ার ডিপার্টমেন্টের কমান্ডার গেলকি গোমেজ জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে ২০ জন আহত হওয়ার খবর দিলেও পরে স্থানীয় সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আনিবাল মোরিলো জানান, আহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৪-এ পৌঁছেছে।
মোরিলো আরপিপি রেডিওকে বলেন, “আমরা ৭৪ জন আহত ব্যক্তিকে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সরিয়ে নিয়েছি, যাদের মধ্যে ১০টি শিশু রয়েছে। আহতদের মধ্যে ১১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”
কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, শপিং কমপ্লেক্সের ফুড কোর্টের ছাদে নির্মাণকাজ চলছিল। ভারী কাঠামো ও নির্মাণসামগ্রী রাখার কারণে ছাদ দুর্বল হয়ে পড়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকট শব্দ শুনে সবাই আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “আমি পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমরা একটি বিকট শব্দ শুনতে পেলাম, তারপর ছাদ ধসে পড়ে। সবাই চিৎকার করে দৌড়াতে শুরু করে। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক মানুষ আটকা পড়েছিল।”
উদ্ধারকাজ ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস ও উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আহতদের দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়।
পেরুর প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভিজকারা দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এ ধরনের দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত কারণ বের করা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কর্তৃপক্ষের তদন্ত ও ভবিষ্যৎ ব্যবস্থা
পেরুর নির্মাণ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, নির্মাণজনিত ত্রুটি, ভারসাম্যহীন কাঠামো এবং নির্মাণসামগ্রী অতিরিক্ত রাখার কারণে ছাদটি ধসে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পেরুর অনেক বাণিজ্যিক ভবনে নিরাপত্তা মানদণ্ড যথাযথভাবে মানা হয় না। তাই এ দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য প্রশাসনকে তৎপর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
একজন নির্মাণ বিশেষজ্ঞ বলেন, “শপিং মল ও জনসমাগমস্থলে নিয়মিত নিরাপত্তা পরিদর্শন করা প্রয়োজন। যদি যথাযথ তদারকি করা না হয়, তাহলে এমন দুর্ঘটনা আরও ঘটতে পারে।”
জনগণের প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
স্থানীয়রা শপিং কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলছেন, “নির্মাণকাজের সময় যদি যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে এত প্রাণহানি ঘটত না।”
একজন আহত ব্যক্তি বলেন, “আমি মাত্র কিছুক্ষণ আগে আমার পরিবার নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পুরো জায়গাটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো। এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।”
সচেতনতা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পেরুর সরকারকে আরও কঠোর নিরাপত্তা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
উপসংহার
পেরুর এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা পুরো দেশকে শোকাহত করেছে। নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন সবাই। প্রশাসন ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।