বিশ্ব

তাইওয়ানকে ৩৩০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র

Advertisement

চীনের আপত্তি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের জন্য ৩৩০ মিলিয়ন ডলারের যুদ্ধবিমান এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তকে তাইওয়ানের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থনের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র চীনের আপত্তি অগ্রাহ্য করে তাইওয়ানের জন্য ৩৩০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদিত বিক্রয়ের মধ্যে প্রধানত এফ-১৬ এবং সি-১৩০ যুদ্ধবিমানের খুচরা যন্ত্রাংশ ও মেরামত সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পেন্টাগন জানিয়েছে, এই সরঞ্জামগুলো তাইওয়ানের বিমানবাহিনীকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ হুমকি মোকাবেলায় সক্ষম রাখবে।

অনুমোদনের বিস্তারিত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই বিক্রয় তাইওয়ানের বিমান বাহিনীর কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। অনুমোদিত অস্ত্র বিক্রয়ের মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিমান এফ-১৬ ও সি-১৩০-এর যন্ত্রাংশ, মেরামত সরঞ্জাম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী।

পেন্টাগন জানায়, এই বিক্রয় তাইওয়ানের বিমান বাহিনীকে বর্তমান হুমকি মোকাবেলা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং ভবিষ্যতে কোনো সামরিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে প্রস্তুত রাখবে।

চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার প্রেক্ষাপট

চীন গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত তাইওয়ানকে তার অংশ বলে দাবি করে। প্রয়োজনে দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে। তবে তাইওয়ান বারবার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জানিয়েছে যে দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধুমাত্র তাইওয়ানের জনগণের।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে তার ক্ষমতা থাকাকালীন চীন তাইওয়ান আক্রমণ করবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন চীনের অসন্তোষ বৃদ্ধি করেছে।

ট্রাম্প–শি বৈঠকের প্রভাব

এই অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন এসেছে দক্ষিণ কোরিয়ায় ট্রাম্প এবং শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পর। ওই বৈঠকে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল। তাইওয়ানীয় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৈঠকের আগে আশঙ্কা ছিল যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের স্বার্থ ‘বেচে দিতে’ পারে। কিন্তু অনুমোদিত অস্ত্র বিক্রয় তাইওয়ানের প্রতি স্পষ্ট সমর্থনের বার্তা বহন করছে।

তাইওয়ানের প্রতিক্রিয়া

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। মুখপাত্র কারেন কুও বলেন, “তাইওয়ান-যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ভিত্তি তৈরি করছে।”

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এক মাসের মধ্যে এই বিক্রয় কার্যকর হবে। এর ফলে বিমান বাহিনী প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বজায় রাখবে, বিমান প্রতিরক্ষা জোরদার হবে এবং চীনের সম্ভাব্য হুমকির প্রতিক্রিয়া দ্রুত কার্যকর করা সম্ভব হবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে তাইপে সন্তুষ্ট হলেও বেইজিং তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ চীনের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কূটনৈতিক সমঝোতার পরও তাইওয়ানকে সমর্থন দেয়ার ইঙ্গিত বহন করে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অস্ত্র বিক্রয় ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং চীনের সামরিক দমনমূলক হুমকি মোকাবেলায় তাইওয়ানকে সহায়তা করবে।

সামরিক বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এফ-১৬ এবং সি-১৩০ বিমানগুলোর খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা তাইওয়ানের বিমান বাহিনীর যুদ্ধ প্রস্তুতি ও স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর ফলে চীনের ‘ধূসর-জোনে’ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করা সহজ হবে।

এছাড়া অনুমোদিত বিক্রয় তাইওয়ানের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও প্রতিরক্ষা নীতির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন তাইওয়ানকে সামরিক সক্ষমতা জোরদার করার পাশাপাশি ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার বার্তা দিচ্ছে। এই পদক্ষেপ চীনের আপত্তি সত্ত্বেও তাইওয়ানের স্বাতন্ত্র্য এবং আত্মরক্ষার সক্ষমতা নিশ্চিত করবে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের এই অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে অঞ্চলের সামরিক এবং কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

এম আর এম – ২২৪৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button