প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যার আশঙ্কায় সৌদি আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে সতর্কতা, মক্কায় জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট
সৌদি আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি। দেশের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র (এনসিএম) জানিয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় মক্কা প্রদেশসহ কয়েকটি এলাকায় জারি করা হয়েছে ‘রেড অ্যালার্ট’। আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন, এই বৃষ্টিপাত চলতে পারে আগামী কয়েকদিন ধরে, এবং এতে আকস্মিক বন্যা ও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
মক্কা ও আশপাশের অঞ্চলে সতর্কতা জারি
এনসিএমের তথ্য অনুযায়ী, মক্কা, মদিনা, রিয়াদ, আল বাহা, জাজান, কাসিম, তাবুক, আসির এবং পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি অংশে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে মক্কা অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টির কারণে ইতোমধ্যেই কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণ মক্কার ডিফা‘ক এলাকায় প্রবল বৃষ্টির পর রাস্তাঘাটে পানি জমে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, অনেক গাড়ি পানিতে আটকে পড়েছে এবং স্থানীয়রা বিকল্প পথে চলাচল করছে।
জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের সতর্কবার্তা
সৌদি আরবের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র (এনসিএম) তাদের অফিসিয়াল বিবৃতিতে জানিয়েছে, ১৪ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর মধ্যে শিলাবৃষ্টি, প্রবল দমকা হাওয়া এবং আকস্মিক বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে।
সংস্থার মুখপাত্র হুসাইন আল-কাহতানি বলেন, “বর্তমান আবহাওয়ার ধারা অনুযায়ী দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। নাগরিকদের নিচু এলাকা ও উপত্যকা এড়িয়ে চলার অনুরোধ করা হচ্ছে।”
প্রশাসনের নির্দেশনা ও সতর্কতা
মক্কা প্রদেশের সংকট ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র ইতোমধ্যেই নাগরিকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পানি জমে যেতে পারে এমন এলাকা, বিশেষ করে উপত্যকা, টানেল ও নিচু স্থানগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
চালকদের পিচ্ছিল রাস্তা এবং কম দৃশ্যমানতার বিষয়ে সতর্ক করে বলা হয়েছে, মক্কা, জেদ্দা ও তাইফের মধ্যবর্তী সড়কে বিশেষভাবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার করেছে এবং উদ্ধার দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মসজিদুল হারাম এলাকায় পরিস্থিতি
যদিও মক্কার দক্ষিণাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে, তবে কেন্দ্রীয় এলাকায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে এখনো বড় ধরনের বৃষ্টি দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানে কেবল প্রবল বাতাস ও মেঘলা আকাশ লক্ষ্য করা গেছে। তবুও পবিত্র নগরীতে সতর্কতা জারি আছে এবং প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রেখেছে যাতে মুসল্লিদের কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়।
আগের বছরগুলোর অভিজ্ঞতা
সৌদি আরবে শীত মৌসুমে হঠাৎ ভারী বৃষ্টি নতুন নয়। প্রায় প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এমন বৃষ্টিপাত দেখা যায়। ২০২৩ সালেও একই সময়ে মক্কা ও জেদ্দায় আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি হয়েছিল, যার ফলে জনজীবন ব্যাহত হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সৌদি আরবের আবহাওয়ায়ও পড়ছে। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার পরিবর্তনের কারণে অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের ধারা দেখা যাচ্ছে, যা আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
নাগরিকদের পরামর্শ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
সৌদি প্রশাসন নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে যেন তারা সরকারি সূত্রের তথ্য অনুসরণ করেন এবং কোনো গুজবে কান না দেন। আবহাওয়া পরিস্থিতির আপডেট নিয়মিতভাবে এনসিএমের ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে।
প্রয়োজনে উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য জরুরি নম্বর খোলা হয়েছে। এছাড়া স্কুল, অফিস এবং ধর্মীয় স্থাপনাগুলোকেও সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
আবহাওয়াবিদদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বেড়েছে। এর পেছনে রয়েছে লাল সাগরের উপর গঠিত নিম্নচাপ। এই নিম্নচাপের কারণে ঠান্ডা বাতাস ও আর্দ্র বায়ু সংঘর্ষে সৃষ্টি হচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত।
একজন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ বলেন, “বর্তমান প্রবণতা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত মাঝারি বা ভারী বৃষ্টি হতে পারে। প্রশাসনের উচিত আগাম প্রস্তুতি নেওয়া, যাতে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়।”
সৌদি আরবে হঠাৎ শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টি ইতিমধ্যেই জনজীবনে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। মক্কা প্রদেশে জারি করা রেড অ্যালার্ট পরিস্থিতির গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতা ও প্রস্তুতি থাকলেও নাগরিকদের সচেতনতা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ রূপ নেবে, তা নির্ভর করছে পরবর্তী কয়েক দিনের আবহাওয়ার উপর।
এম আর এম – ২২৩৪,Signalbd.com



