বিশ্ব

৫০ বছরে সবচেয়ে সফল হজ হয়েছে এ বছর: সৌদি

Advertisement

২০২৫ সালের হজ মৌসুমকে গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে সফল ঘোষণা করেছে সৌদি আরব। হজযাত্রীদের সন্তুষ্টির হার ৯১ শতাংশে পৌঁছেছে। প্রযুক্তি ব্যবহার, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ঐতিহাসিক স্থান সংস্কারের ফলে এবারের হজ অতীতের তুলনায় আলাদা ও স্মরণীয় হয়েছে।

সৌদি আরবের ঘোষণায় ৫০ বছরের সর্বোচ্চ সফল হজ

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী ড. তাওফিক আল-রাবিয়াহ জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের হজ মৌসুমটি ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, “হজযাত্রীদের সন্তুষ্টির হার ৯১ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এটি শুধুমাত্র হজ ব্যবস্থাপনার উৎকর্ষই নয়, বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সৌদি আরবের সেবা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতিফলন।”

মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, এবারের হজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে।

পঞ্চম হজ সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক উপস্থিতি

রোববার (৯ নভেম্বর) জেদ্দায় শুরু হয়েছে পঞ্চম হজ সম্মেলন ও প্রদর্শনী। দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম বাদশাহ সালমানের পৃষ্ঠপোষকতায় উদ্বোধন করেন মক্কার গভর্নর প্রিন্স সাউদ বিন মিশআল। ‘মক্কা থেকে বিশ্বে’ শিরোনামের এই সম্মেলনে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধি, ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ ও গবেষক অংশগ্রহণ করেছেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রিন্স সাউদ বলেন, “হজযাত্রীদের সেবা ও সুবিধা প্রদানে সৌদি আরব তার প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজের নীতি অনুসরণ করছে। এবারের হজ নিরাপদ, সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।”

হজ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির নতুন যুগ

মন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়াহ জানান, এবার হজ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের নতুন যুগ শুরু হয়েছে। নুসুক অ্যাপের ব্যবহারকারী সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৪ কোটির বেশি ছাড়িয়েছে। এছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর ‘নুসুক এআই’ ফিচার যুক্ত হয়েছে, যা হজযাত্রীদের নুসুক, নিরাপত্তা ও সেবা ব্যবস্থাকে আরও সহজ ও কার্যকর করেছে।

তিনি বলেন, “প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য তথ্য, পথনির্দেশনা ও জরুরি সেবা দ্রুততর হয়েছে। এটি হজ ব্যবস্থাপনার নতুন মান নির্ধারণ করেছে।”

মক্কা ও মদিনার ঐতিহাসিক স্থান সংস্কার

সৌদি আরব সরকার মক্কা ও মদিনার ৭১টি ঐতিহাসিক স্থান সংস্কার করেছে। মন্ত্রী জানান, সংস্কারকৃত স্থানগুলো ইতোমধ্যে ৩০ লাখ দর্শনার্থী ও হজযাত্রী পরিদর্শন করেছেন। সংস্কারের ফলে পর্যটক ও হজযাত্রী উভয়ের জন্য নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

এতে হজের মান বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ইতিহাস সংরক্ষণের পাশাপাশি ভ্রমণ ও শিক্ষা উভয় দিকেই ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

২০২৫ সালের হজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত জোরদার করা হয়েছিল। সরকার জনসমাগম, রাস্তা, পরিবহন ও পবিত্র স্থানগুলোতে কড়া নজরদারি করেছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও জরুরি চিকিৎসা পরিষেবাও সব স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণে নিশ্চিত করা হয়েছে।

মন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়াহ বলেন, “হজযাত্রীদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। নিরাপদ ও সুষ্ঠু হজের জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা আন্তঃসংযোগে কাজ করেছে।”

ভবিষ্যতের হজ প্রস্তুতি

মন্ত্রী জানান, আগামী বছরের হজের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ৬০ শতাংশ হজযাত্রীর চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এবং পবিত্র স্থানের ৫০ শতাংশ ইতোমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া নতুন প্রযুক্তি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং দর্শনার্থী সুবিধা আরও উন্নত করা হবে।

তিনি বলেন, “সৌদি আরবের লক্ষ্য ভবিষ্যতেও বিশ্বের সর্বোচ্চ মানের হজ সেবা নিশ্চিত করা।”

বিশ্লেষণ ও আন্তর্জাতিক প্রভাব

বিশ্বজুড়ে হজযাত্রী ও ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা এবারের হজকে একটি ন্যূনতম ঝুঁকি, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সৌদি আরবের এই উদ্যোগ মানবতার ঐক্য, ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ব এবং নিরাপদ হজের নতুন মান নির্ধারণ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি ও নিরাপত্তার সঠিক সমন্বয় আগামীতে হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর করবে এবং বিশ্বব্যাপী হজযাত্রীদের সন্তুষ্টি আরও বাড়াবে।

২০২৫ সালের হজ ইতিহাসে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, সেবা ও সংস্কারের মাধ্যমে হজযাত্রীদের সন্তুষ্টির হার ৯১ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সৌদি আরব ভবিষ্যতেও এই মান বজায় রাখার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, হজ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়কে আরও শক্তিশালী করে সৌদি আরব বিশ্বে ধর্মীয় সেবার মান বৃদ্ধি করবে।

এম আর এম – ২১৯০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button