বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা: আইপিডিসির “ফাইন্যান্স ফর দ্য প্ল্যানেট অ্যান্ড পিপল” কৌশল সাড়া ফেলেছে
বাংলাদেশের অগ্রণী আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স পিএলসি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫-এ দুটি পুরস্কার অর্জন করেছে। এই পুরস্কার শুধু প্রতিষ্ঠানটির টেকসই অর্থায়ন নীতির প্রশংসাই নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষায় তাদের নিবিড় কাজের প্রতিফলন।
আইপিডিসি ফাইন্যান্সকে ‘সর্বাধিক টেকসই আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)’ হিসেবে নির্বাচিত করে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তাদের “ফাইন্যান্স ফর দ্য প্ল্যানেট অ্যান্ড পিপল; আইপিডিসি’স হলিস্টিক এসডিজি ড্রাইভেন স্ট্রাটেজি” কৌশলের জন্য। এই কৌশল দেশের আর্থিক খাতের মধ্যে টেকসই উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে অর্থায়ন এবং ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
টেকসই ঋণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে পরিবেশবান্ধব পরিবর্তন
আইপিডিসি ফাইন্যান্স ২০২৪ সালের এক বছরে টেকসই উন্নয়ন ও এসডিজি-সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্পে ৩৮৫৫.২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যা তাদের মোট ঋণের ৪২.০৬ শতাংশের বেশি। এই হার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ন্যূনতম সীমার অনেক উপরে, যা প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রমাণ করে।
এই ঋণগুলো সরাসরি নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন, নারী নেতৃত্বাধীন উদ্যোগে আর্থিক সহায়তা এবং পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণের মতো ক্ষেত্রগুলোর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
উদ্ভাবনী পণ্য ও বিশেষায়িত শাখার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নে অবদান
আইপিডিসি শুধু ঋণ দেয়ার মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকেনি; ‘জয়ী’ ও ‘প্রীতি’ নামক উদ্ভাবনী আর্থিক পণ্য এবং ‘জয়ী ৩৬০’ বিশেষায়িত শাখার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি লিঙ্গসমতা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও জলবায়ু সহনশীলতা গড়ে তুলতে ব্যাপক কাজ করছে।
এই পণ্য ও সেবা গ্রামীণ নারীদের আধুনিক কৃষিকাজে সাহায্য, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা এবং জলবায়ু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদান রাখছে। এর ফলে আর্থিক পরিষেবা এখন আর শুধু ব্যবসার লেনদেন নয়, সমাজের সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক একটি হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বক্তব্য
আইপিডিসি ফাইন্যান্স পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিজওয়ান দাউদ সামস বলেন,
“এই পুরস্কার আমাদের বিশ্বাস ও কাজের স্বীকৃতি। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো অর্থনীতি কেবল সংখ্যার খেলা নয়; এটি মানুষের ক্ষমতায়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের একান্ত মাধ্যম। আমরা গ্রামীণ নারীদের আধুনিক কৃষিতে সহায়তা করি, প্রতিটি ঋণে টেকসই উন্নয়নের মূলনীতি যোগ করি। আমাদের লক্ষ্য একটাই—একটা টেকসই ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।”
এসডিজি ও বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা
জাতিসংঘের ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) পৃথিবীর সব দেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে যেমন বাংলাদেশ, যেখানে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও নারী-পুরুষের মধ্যে অসমতা রয়েছে, সেখানে এসডিজি বাস্তবায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে কাজ করে এসডিজি অর্জনের জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আইপিডিসি ফাইন্যান্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এই জাতীয় উদ্যোগকে সার্থক করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
টেকসই অর্থায়ন: ভবিষ্যতের পথ
টেকসই অর্থায়ন বলতে বোঝানো হয় এমন আর্থিক সেবা, যা পরিবেশ, সমাজ ও অর্থনীতির মধ্যে সুষম উন্নয়ন ঘটায়। এটি শুধু লাভের হিসাব নয়, বরং উন্নয়ন কর্মসূচির মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, পরিবেশ রক্ষা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
আইপিডিসি ফাইন্যান্সের উদাহরণ দেখায়, কিভাবে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের কৌশল ও কার্যক্রমকে পরিবেশ-বান্ধব ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুনর্বিন্যাস করে স্থায়িত্ব ও উন্নয়নের মিশ্রণ ঘটাতে পারে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে আর্থিক খাতেও পরিবর্তন আসছে। বাংলাদেশেও এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া জরুরি। টেকসই ঋণ, নতুন আর্থিক পণ্য, ডিজিটাল সেবা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির মাধ্যমে এই পরিবর্তনগুলোকে শক্তিতে পরিণত করা সম্ভব।
আইপিডিসি ফাইন্যান্সের উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলো এদিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করছে, যা অন্য প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের জন্য পথপ্রদর্শক।



