ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের সামনে সোমবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ এক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে এলাকা। ঘটনাস্থলে আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন কমপক্ষে ৮ জন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। বিস্ফোরণের পর এলাকা জুড়ে জারি করা হয়েছে উচ্চ সতর্কতা।
ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল লাল কেল্লা এলাকা
সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দিল্লির লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের সামনে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণ ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হঠাৎ করেই পার্কিং করা একটি প্রাইভেট গাড়ি থেকে প্রচণ্ড শব্দে আগুনের গোলা ছিটকে বের হয়, মুহূর্তেই পাশের আরও কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলেই ৮ জনের মৃত্যু হয় এবং গুরুতর আহত হন আরও অন্তত ১৫ জন।
দিল্লি ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ততক্ষণে বেশ কয়েকটি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে যায় এবং আশেপাশের দোকানগুলোতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়।
দ্রুত উদ্ধার অভিযান ও আগুন নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সন্ধ্যা ৭টা ০৫ মিনিটে প্রথম ফোন কল আসে। সঙ্গে সঙ্গে সাতটি দমকলের গাড়ি পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ারম্যানরা প্রায় ৪৫ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
দিল্লি ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার বলেন, “গাড়িটিতে বিস্ফোরণের পর দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি, তবে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি।”
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, বিস্ফোরণটি এত শক্তিশালী ছিল যে কাছাকাছি পার্ক করা তিন থেকে চারটি গাড়িও ধ্বংস হয়ে যায়। বিস্ফোরণের পর এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা ও তদন্তের অগ্রগতি
দিল্লি পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এটি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী বিস্ফোরণ ছিল। আমরা ঘটনাস্থল থেকে ধাতব টুকরো, ব্যাটারি অংশ ও জ্বলন্ত তেলের নমুনা সংগ্রহ করেছি। প্রাথমিকভাবে এটি নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।”
ফরেনসিক দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং আগুনে পোড়া গাড়িগুলো থেকে রাসায়নিক ও বারুদজাতীয় পদার্থের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট (বিডিএস) ও স্পেশাল সেল পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের চোখে ভয়াবহতা
একজন স্থানীয় বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমি আমার বারান্দা থেকে বিশাল এক আগুনের গোলা দেখতে পাই। মুহূর্তের মধ্যে মানুষ দৌড়ে আসতে থাকে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই একের পর এক গাড়িতে আগুন ধরে যায়। বিস্ফোরণের শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে।”
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশ। অনেকেই আতঙ্কে দৌড়ে পালাতে গিয়ে আহত হয়েছেন।”
আহতদের হাসপাতালে নেওয়া ও মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা
লোকনায়ক জয়প্রকাশ হাসপাতাল এবং রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে আহতদের ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আহতদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
অতীতেও ঘটেছে এমন ঘটনা
এর আগেও দিল্লিতে একাধিকবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ সালে দিল্লি হাইকোর্টের সামনে বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন ১৫ জন। ২০১৯ সালেও পুরনো দিল্লির এক গুদামে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রাণহানি ঘটে। লাল কেল্লা এলাকা সংবেদনশীল হওয়ায় এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবসময়ই কঠোর থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটানো নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এটি দুর্ঘটনা না পরিকল্পিত হামলা, তা নিশ্চিত করতে হবে দ্রুত।
দিল্লি জুড়ে বাড়ানো হলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ঘটনার পর দিল্লি পুলিশ রাজধানীজুড়ে সতর্কতা জারি করেছে। সব মেট্রো স্টেশন, সরকারি ভবন ও পর্যটনকেন্দ্রে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। লাল কেল্লা ও জামা মসজিদ এলাকার যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, “আমরা সব ধরনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি। প্রয়োজনে তদন্তে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও যুক্ত করা হবে।”
দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লা সংলগ্ন এলাকায় এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত এটি দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হামলা, তা স্পষ্ট নয়, তবে নিহত ও আহতদের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাজধানীর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।
এম আর এম – ২১৬৮,Signalbd.com



