বিশ্ব

জাতিসংঘের জলবায়ু ন্যায়বিচার: আফগান সরকারের উদ্বেগ ও আহ্বান

Advertisement

আফগান ইমারাতে ইসলামিয়ার সরকার জাতিসংঘের ‘জলবায়ু ন্যায়বিচার’ বিষয়ক কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশের জাতীয় পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (NEPA) সোমবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, আফগান জনগণ বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। খরা, বন্যা, হিমবাহের গলন, ভূমিধস, কৃষি উৎপাদন হ্রাস, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুচ্যুতির মতো সংকট আফগান সমাজকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে।

ইমারাত সরকার জানিয়েছে, আফগানিস্তান এই সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণে প্রস্তুত। তবে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কোপ-৩০ (COP-30)-এ আফগানিস্তানের কোনো আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ না পাওয়া গভীর উদ্বেগের বিষয়। সরকারের বক্তব্য, “এই অনুপস্থিতি জলবায়ু ন্যায়বিচার, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও মানবিক ঐক্যের নীতির পরিপন্থী।”

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: আফগানিস্তান বিশ্বের সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে

জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আফগানিস্তান বিশ্বের এমন দেশগুলোর মধ্যে যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে তীব্র। বিশেষ করে:

  • খরা ও পানির সংকট: দেশে বর্ষার অভাব ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে খরা চরম আকার ধারণ করেছে। ফলশ্রুতিতে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে।
  • বন্যা ও ভূমিধস: হঠাৎ ভারি বৃষ্টিপাত ও হিমবাহ গলনের কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিধস ও বন্যা ঘটছে, যা গ্রামীণ জনপদকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
  • কৃষি ও অর্থনীতি: কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের অর্থনীতি জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাবের মুখোমুখি। ফসলের উৎপাদন হ্রাস, পশুপালন সমস্যায় পড়া এবং কৃষি আয় কমে যাওয়া দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিকে দুর্বল করছে।
  • জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ: হিমবাহ গলে যাওয়া, বনাঞ্চল ধ্বংস ও বন্যপ্রাণীর ক্ষতি আফগানিস্তানের পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করছে।

এই প্রভাবগুলো শুধু পরিবেশগত নয়, বরং সামাজিক ও মানবিক সংকটও তৈরি করছে। বাস্তুচ্যুত লোকজনের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, খাদ্য নিরাপত্তা কমছে, এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে।

আফগান সরকারের উদ্বেগ এবং আন্তর্জাতিক আহ্বান

ইমারাত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আফগানিস্তান কার্যকর ভূমিকা নিতে প্রস্তুত। কিন্তু COP-30-এ তাদের অংশগ্রহণ না করানো আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও মানবিক সহমতের পরিপন্থী।

NEPA’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে:

“জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি, আফগানিস্তানের ন্যায্য অধিকার স্বীকৃতির মাধ্যমে আমাদের কণ্ঠস্বর বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দিন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ আফগানের দুঃখ ও চ্যালেঞ্জ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছানো প্রয়োজন।”

এই আহ্বান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও পরিবেশ সংক্রান্ত সংস্থাগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

COP-30: জলবায়ু ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক ফোরাম

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কোপ-৩০ এবার ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য বৈশ্বিক জলবায়ু নীতিমালা নির্ধারণ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং দেশগুলোর জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তান যেমন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম, তাই COP-30-এ তাদের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে আফগান জনগণের অভিজ্ঞতা, সমস্যার বাস্তব চিত্র এবং প্রয়োজনীয় সমাধানের দিকগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরা যাবে।

বর্তমানে আফগানিস্তানের অনুপস্থিতি শুধু দেশের জন্য নয়, বরং বৈশ্বিক জলবায়ু ন্যায়বিচারের প্রচেষ্টার জন্যও একটি বড় শূন্যস্থান তৈরি করছে।

আফগান জনগণ ও জলবায়ু ন্যায়বিচার

অভিজ্ঞতাবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু ন্যায়বিচার কেবল পরিবেশগত ইস্যু নয়, মানবাধিকার ও সামাজিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। আফগান জনগণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, তাদের বসবাস ও জীবিকা হুমকির মুখে।

  • বাস্তুচ্যুতদের সংখ্যা বৃদ্ধি: খরা, বন্যা ও ভূমিধসের কারণে গ্রামের মানুষ শহরে বা নিরাপদ এলাকায় স্থানান্তরিত হচ্ছে।
  • সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ: বাস্তুচ্যুত জনগণ তাদের জীবনযাত্রা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
  • দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি: জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাগুলো দীর্ঘমেয়াদে আফগানিস্তানের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করবে।

এই প্রেক্ষাপটে আফগান সরকারের আহ্বান হলো, COP-30 এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগান জনগণের কণ্ঠস্বরকে শুনুন এবং বৈশ্বিক সহায়তা ও নীতি নির্ধারণে তাদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করুন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব

বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি বোঝা এবং সহায়তা প্রদান করা জরুরি। আফগান সরকারের মতে:

  1. ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে তাত্ক্ষণিক মানবিক সহায়তা প্রদান।
  2. জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে অবকাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত সহায়তা।
  3. COP-30 এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে আফগানিস্তানের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।

এই পদক্ষেপগুলো আন্তর্জাতিক জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং মানবিক সহযোগিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আফগান ইমারাতে ইসলামিয়ার সরকার এবং জনগণ জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাচ্ছে, তাদের কণ্ঠস্বর এবং ন্যায্য অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে। জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাবের কারণে আফগান জনগণ বর্তমানে চরম বিপর্যয়ের মুখে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং মানবিক ঐক্যের জন্য আফগানিস্তানের অন্তর্ভুক্তি অপরিহার্য।

বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আফগান জনগণের অভিজ্ঞতা ও কণ্ঠস্বর শোনা এবং সমাধানের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা একান্ত জরুরি। শুধু তখনই বৈশ্বিক জলবায়ু ন্যায়বিচার কার্যকর এবং সবার জন্য সমান হতে পারবে।

MAH – 13719 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button