সৌদি আরবে দুই নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্থাপনায় হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা একাধিক সরকারি স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল এবং সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সরকারি ঘোষণা
রবিবার স্থানীয় সময় দুপুরে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, দুই নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, তারা “রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য হিসেবে” দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
সরকারি সূত্র জানায়, অভিযুক্তরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা করেছিল। তবে এই পরিকল্পনা সফল হওয়ার আগেই নিরাপত্তা সংস্থা তাদের আটক করে।
অভিযুক্তদের পরিচয় ও অভিযোগের বিবরণ
বার্তাসংস্থা এসপিএ বলেছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজনই সৌদি নাগরিক। তাদের নাম প্রকাশ করা না হলেও জানা গেছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে অন্যদেরও উসকানি দিচ্ছিলেন।
বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয় যে, অভিযুক্তরা ধর্মীয় স্থাপনাসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন।
সৌদি আরবে সন্ত্রাসবিরোধী কঠোর আইন
মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্রশাসিত দেশ সৌদি আরবে সন্ত্রাসবিরোধী আইন অত্যন্ত কঠোর। কোনো রাজনৈতিক দল গঠন, সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কিংবা সশস্ত্র সংগঠনে যোগদান আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
সৌদি সরকারের আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলতে পারে এমন যেকোনো কর্মকাণ্ডের জন্য মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেওয়া হয়। এই আইনের আওতায় গত কয়েক বছরে একাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মানবাধিকার সংগঠনগুলো সৌদি আরবের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নীতির সমালোচনা করে আসছে। তাদের মতে, বিচার প্রক্রিয়া অনেক সময় আন্তর্জাতিক মান অনুসারে স্বচ্ছ হয় না।
তবে সৌদি সরকার বরাবরই বলে আসছে, তারা দেশের নিরাপত্তা ও নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে কঠোর আইন কার্যকর রাখছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “যে কেউ রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত হবে, তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করা হবে।”
আগেও এমন দণ্ড কার্যকর হয়েছে
সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া নতুন ঘটনা নয়। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়েও একই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। এছাড়া মাদক পাচার, ধর্ষণ, হত্যাসহ নানা অপরাধেও প্রতি বছর বহু মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে দেশটি।
জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে ইরান ও সৌদি আরবে।
নিরাপত্তা নাকি মানবাধিকার?
বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি সরকার তাদের নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। এই কারণেই যে কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে দেশটি।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে সন্ত্রাস রোধের চেয়ে এটি মানবাধিকারের পরিপন্থী পদক্ষেপ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে সৌদি সরকার মনে করে, কঠোর আইন না থাকলে চরমপন্থার বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়।
সৌদি আরবে দুজন নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল—দেশটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। মানবাধিকার ও আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন থাকলেও সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, “দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”
তবে ভবিষ্যতে দেশটি মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে বিকল্প শাস্তির পথে যায় কিনা, তা এখন দেখার বিষয়।
এম আর এম – ২১৫২,Signalbd.com



