তুরস্কের প্রসিকিউটর কার্যালয় শুক্রবার ঘোষণা করেছে, গাজায় জাতি হত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চরম মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
পরোয়ানা জারির তালিকায় ৩৭ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কার্তজ, জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির এবং সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আইয়াল জামির। ইস্তাম্বুলের প্রসিকিউটর কার্যালয় তালিকার পুরো নাম প্রকাশ করেনি।
ঘটনার বিবরণ
তুরস্কের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় ধারাবাহিকভাবে জাতি হত্যার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত। ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে হামলায় ৫০০ জন নিহত হন। এরপর ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ইসরায়েলি সেনারা চিকিৎসা সরঞ্জাম ধ্বংস করে, গাজা অবরুদ্ধ করে রাখে এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত করে।
তুরস্ক গাজায় তুরস্ক-ফিলিস্তিন ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল নির্মাণ করেছিল। গত মার্চে ইসরায়েল সেখানে বোমা হামলা চালায়। এই ঘটনার কারণে তুরস্কের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও গুরুত্ব পায়।
তুরস্কের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রায় এক বছর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। এছাড়া, ইসরায়েল জাতি হত্যা চালাচ্ছে অভিযোগ তুলে গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা করেছিল। তুরস্কও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধে ইসরায়েল অন্তত ৬৮,৮৭৫ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং আরও ১,৭০,০০০ জন আহত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তুরস্কের পদক্ষেপকে অনেক বিশ্লেষক মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের রক্ষাকারী হিসেবে দেখছেন।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েল তুরস্কের পদক্ষেপকে ‘প্রচারণার কৌশল’ হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উল্লেখ করেন, ইসরায়েল ঘৃণাভরে তুরস্কের প্রচারণার কৌশল প্রত্যাখ্যান করেছে।
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস তুরস্কের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছেন, তুরস্ক ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি আন্তরিক ও মানবিক অবস্থান প্রকাশ করেছে। হামাসের মতে, এই পদক্ষেপ তাদের রাজনৈতিক ও মানবিক অবস্থানকে সমর্থন করবে।
বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তুরস্কের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। এটি ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াবে এবং ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সমর্থন প্রদর্শন করবে। তবে, বাস্তবায়নে প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
তুরস্কের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তুরস্কের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি কার্যক্রম মনিটর করতে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে শক্তি দেখাতে সাহায্য করবে।
তুরস্কের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইসরায়েলকে সরাসরি আন্তর্জাতিক মনোযোগে নিয়ে এসেছে। নেতানিয়াহু এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় খুলতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই ঘটনাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ভবিষ্যতে এটি কিভাবে প্রভাব ফেলবে তা দেখতে সময় লাগবে।
এম আর এম – ২১৪৬,Signalbd.com



