যুক্তরাষ্ট্রের সরকার সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ শারা আল-জুলানীর নাম ‘সন্ত্রাসী’ নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত এসেছে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের পূর্বেই। এতে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন দিক নির্দেশনার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (৭ নভেম্বর) মার্কিন অর্থ বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী, আল-কায়েদার সহযোগী সংগঠনের নেতা হিসেবে আল-জুলানীর নাম ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ তালিকা থেকে সরানো হয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে তাঁর ওপর থেকে আর আর্থিক ও ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা আরোপ থাকবে না।
এর আগে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ শারা আল-জুলানীর ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টির গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আহমাদ শারা আল-জুলানী: কে তিনি?
আহমাদ শারা আল-জুলানী সিরিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। গত বছর তিনি হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) আন্দোলনের নেতৃত্বে সিরিয়ার স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। এরপর সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হন।
আল-জুলানীর নেতৃত্বে এই সংস্থা সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং সরকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, আল-জুলানী কৌশলগতভাবে রাজনৈতিক ও সামরিক দুই ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ও কূটনৈতিক প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মার্কিন অর্থ বিভাগের ঘোষণার মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, আল-জুলানীকে আর ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে না। এর ফলে মার্কিন ও সিরীয় সম্পর্কের মধ্যে নতুন সংযোগের পথ প্রশস্ত হতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার অংশ। এছাড়া ট্রাম্পের সঙ্গে আল-জুলানীর বৈঠকও আন্তর্জাতিক কূটনীতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে ধরা হচ্ছে।
ওয়াশিংটনে আল-জুলানীর সফর
আল-জুলানী ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে। এটি মার্কিন রাজধানীতে কোনো সিরীয় রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম সফর। সফরের এজেন্ডা এখনও পুরোপুরি প্রকাশ করা হয়নি, তবে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে বৈঠকে সিরিয়ার শান্তি প্রক্রিয়া, মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা এবং দারিদ্র্য ও পুনর্গঠন বিষয়ক আলোচনা হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৈঠকটি শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নয়, বরং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি সিরিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় নতুন দিক নির্দেশনা দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই পদক্ষেপটি বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এই বিষয়টি নজরে রেখেছে। অনেক দেশ এটি একটি কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখলেও, কিছু সমালোচক এটিকে ‘বৈষম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আল-জুলানীর নাম ‘সন্ত্রাসী তালিকা’ থেকে সরানো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কৌশল প্রকাশ করে। এতে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র কেবল নিরাপত্তা নয়, কূটনীতি এবং মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব
সিরিয়া দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক সংকটে জর্জরিত। বাশার আল-আসাদের শাসনকাল থেকে শুরু করে হায়াত তাহরির আল-শামের উত্থান, আন্তর্জাতিক санкশন ও অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ দেশটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে।
আল-জুলানীর নেতৃত্বে হায়াত তাহরির আল-শাম সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছে। তার প্রেসিডেন্সি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য নতুন সম্ভাবনার সূচনা করতে পারে। তবে নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার বিষয়ক চ্যালেঞ্জ এখনও বহাল রয়েছে।
ভবিষ্যৎ ধাপ
বিশ্লেষকরা আশা করছেন, ওয়াশিংটনে আল-জুলানীর সফর ও তার নাম ‘সন্ত্রাসী তালিকা’ থেকে সরানোর ফলে সিরিয়ার রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নতুনভাবে চলবে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রাষ্ট্রগুলো একযোগে সিরিয়ার পুনর্গঠন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং রাজনৈতিক সংলাপের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠবে।
MAH – 13669 I Signalbd.com



