বিশ্ব

পাকিস্তানি জনগণের সুরক্ষায় পাল্টা হামলা থেকে বিরত আফগান সেনারা: জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ

Advertisement

ইস্তানবুলে চলমান কূটনৈতিক আলোচনার মাঝেও পাকিস্তানের সামরিক হামলার বিরুদ্ধে আফগান সেনারা প্রতিক্রিয়া দেখানো থেকে বিরত রয়েছে। আফগান ইমারাতে ইসলামিয়া সরকারের মুখপাত্র মাওলানা জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এক সংবাদ বিবৃতিতে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, চলমান কূটনৈতিক প্রক্রিয়া এবং পাকিস্তানি জনগণের সুরক্ষার জন্য আফগান সেনারা সরাসরি প্রতিহিংসামূলক হামলা চালানো থেকে বিরত রয়েছে। তিনি এটিও উল্লেখ করেন যে, পাকিস্তান এই আচরণের মাধ্যমে পুনরায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।

ইস্তানবুলে ৩য় দফার আলোচনার ব্যর্থতা

মুজাহিদ বলেন, “আজকের পাকিস্তানি হামলা স্পিন বোলদাকে কেন্দ্র করে ইস্তানবুলে শুরু হওয়া ৩য় দফার আলোচনাকে ব্যাহত করেছে।” তিনি আরও বলেন, এটি পাকিস্তানের বিশ্বাসঘাতকতার পরিচায়ক, কারণ দ্বিতীয় দফার আলোচনায় যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার এবং তা সম্প্রসারণের স্পষ্ট চুক্তি করা হয়েছিল।

মুখপাত্র বলেন, “এভাবে চুক্তিভঙ্গ করা খুবই উদ্বেগজনক। আমাদের আশা ছিল, উভয় পক্ষ শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। কিন্তু আজকের ঘটনার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।”

স্পিন বোলদায় হামলার বিশদ

দেশটির সরকারি সূত্রের বরাতে তলো নিউজ জানিয়েছে, পাকিস্তানি সেনারা আজ বিকেলে কান্দাহারের স্পিন বোলদা এলাকায় বেসামরিক স্থাপনা ও বাণিজ্যিক বাজারে গুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করেছে। হামলায় ২ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে।

সরকারি সূত্র আরও জানিয়েছে, পাকিস্তান আজ সকালে ও বিকেলে মোট দুইবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এতে উভয় দেশের মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

আফগানিস্তানে নিযুক্ত আমেরিকার সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি জালমী খলিলজাদ এই হামলাকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি ইসলামাবাদকে সতর্ক করেছেন এবং বিষয়টি স্পষ্ট করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন কেবল স্থানীয় শান্তি প্রক্রিয়াকে বিপন্ন করছে না, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশ্বাসও ক্ষুণ্ণ করছে। পাকিস্তানকে এটি সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।”

আফগান সরকারের অবস্থান

মুজাহিদ আরও বলেন, আফগান সেনারা বর্তমান পরিস্থিতিতে সযত্নে কাজ করছে এবং তারা নিশ্চিত করছে যে পাকিস্তানি জনগণ কোনো ক্ষতির মুখোমুখি হবে না। তিনি বলেন, “আমরা চাই শান্তি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু চুক্তিভঙ্গ অব্যাহত থাকলে শান্তি প্রক্রিয়া বিপন্ন হবে।”

তিনি আরও জানান, আফগান সেনারা কেবল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বজায় রাখছে এবং কোনো আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত পরিস্থিতি

সীমান্তবর্তী স্পিন বোলদা এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই উভয় দেশের সেনাদের উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু। সীমান্ত ধরে ছোট ছোট সংঘাত নিয়মিত ঘটছে। তবে এবার আফগান সরকার স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে তারা কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ

সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী বেসামরিক মানুষরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়দের মতে, “হঠাৎ গুলি এবং মর্টারের শব্দ আমাদের জীবনের জন্য বিপদ তৈরি করছে। আমরা চাই শান্তি ফিরে আসুক।”

শান্তি প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জ

ইস্তানবুলে চলমান ৩য় দফার আলোচনা পাকিস্তান-আফগানিস্তান শান্তি প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে পুনরায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ফলে আলোচনা প্রভাবিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে আরও শক্তিশালী আন্তর্জাতিক নজরদারি এবং মধ্যস্থতাকারী প্রয়োজন।

তাদের মতে, “আফগান সেনাদের প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপে না গিয়ে শান্তি প্রক্রিয়াকে অগ্রগতি করার সিদ্ধান্ত, দীর্ঘমেয়াদে ভয়ঙ্কর উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে।”

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও সীমান্তে বেসামরিকদের ওপর হামলা এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে। তারা উভয় দেশকে সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আফগান সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং সীমাবদ্ধ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আফগানিস্তানের প্রতি ইতিবাচক ইমেজ গড়ে তুলছে। এটি ভবিষ্যতে শান্তি আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সামারি

সংক্ষেপে, আফগান সরকার স্পষ্ট করেছে যে তারা পাকিস্তানের সামরিক হামলার প্রতিশোধ নিতে চাইছে না। ইস্তানবুলে চলমান কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান রেখে তারা শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন এবং স্পিন বোলদায় বেসামরিক স্থাপনা ও বাজারে হামলা, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আফগান সরকার শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি অটল থাকার সংকল্প দেখাচ্ছে।

এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতের আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর নজরদারি, উভয় দেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়াবে।

MAH – 13668 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button