সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমকে শোকজ করেছে আদালত। খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষককে বহিষ্কার সংক্রান্ত রিটের প্রেক্ষিতে এ নোটিশ জারি করা হয়।
ঘটনা
সিলেটের সিনিয়র সহকারী জজ (সদর আদালত) গত ১১ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমকে শোকজ করেন। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সেই নোটিশ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন ডিসি নিজেই। আদালত তাকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
শোকজ নোটিশের বিস্তারিত
আদালত সূত্রে জানা যায়, খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষক ও ভাইস প্রিন্সিপালকে বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে একটি রিট আবেদন করা হয়। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসককে শোকজ করা হয়। আদালত মনে করছে, এই বহিষ্কার সিদ্ধান্তে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষিকা আবেদা হকের আইনজীবী ইরশাদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সিলেটের খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ দীর্ঘদিন ধরে মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের জন্য পরিচিত। তবে সম্প্রতি দুই শিক্ষক ও ভাইস প্রিন্সিপালকে বহিষ্কার করার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটি আলোচনায় আসে। এ সিদ্ধান্তকে অনেকেই একপাক্ষিক ও অস্বচ্ছ বলে সমালোচনা করেন।
এ ঘটনায় শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আদালতে রিট দায়ের করা হয়। মামলার নথি পর্যালোচনা করে আদালত জেলা প্রশাসককে ব্যাখ্যা দিতে বলে।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম জানিয়েছেন, নোটিশ তার কার্যালয়ে এখনও পৌঁছায়নি। তবে পৌঁছালে যথাযথভাবে আদালতের নির্দেশনা মেনে জবাব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “আমরা সব সময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।”
প্রশাসনিক মহলে এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে সরাসরি শোকজ জারি করা একটি বিরল ঘটনা। আবার অনেকেই বলছেন, প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন।
আদালতের নির্দেশনা
আদালত নোটিশে জেলা প্রশাসককে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলেছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কেন শিক্ষকদের বহিষ্কারের প্রক্রিয়ায় জেলা প্রশাসকের সম্পৃক্ততা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেলা প্রশাসকের মতো উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে শোকজ করার ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না। এ কারণে বিষয়টি আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনায় শিক্ষা মহল ও স্থানীয় সমাজে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক মনে করছেন, প্রশাসনের সিদ্ধান্তে যথাযথ পরামর্শ নেওয়া হয়নি। এর ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে, শিক্ষকদের পক্ষে থাকা আইনজীবীরা বলছেন, আদালতের এই উদ্যোগ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তারা আশা প্রকাশ করছেন, প্রশাসন ভবিষ্যতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও সতর্ক হবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
প্রশাসনিক বিষয়ক এক বিশেষজ্ঞ বলেন, “এই ঘটনা বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছে। আদালতের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে বোঝা যাচ্ছে, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তও আইনের বাইরে নয়।”
একজন শিক্ষা বিশ্লেষক বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বহিষ্কার একটি গুরুতর সিদ্ধান্ত। এতে সঠিক প্রক্রিয়া ও ন্যায়সংগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হলে শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
সিলেটের জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলমকে শোকজ করার ঘটনাটি প্রশাসনিক অঙ্গনে বিরল হলেও এটি দেশের আইনি ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতার উদাহরণ হয়ে থাকবে। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তার জবাব আদালতে জমা দিতে হবে। এরপর আদালত কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটিই এখন সবার নজরে।
এম আর এম – ১৩৩৮,Signalbd.com



