বিশ্ব

মামদানির স্ত্রী কে এই রমা দুয়াজি?

Advertisement

নিউইয়র্ক সিটির নতুন নির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি একজন মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তার স্ত্রী রমা দুয়াজি শুধু জীবনসঙ্গীই নন, তিনি একজন প্রতিভাবান শিল্পী ও সামাজিক সচেতনতার নেপথ্য চালিকা শক্তি।

নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে সবচেয়ে কনিষ্ঠ ‘ফার্স্ট লেডি’ হতে যাচ্ছেন মাত্র ২৮ বছর বয়সী রমা দুয়াজি। তার স্বামী জোহরান মামদানি সম্প্রতি মেয়র নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। এই জয়ের সঙ্গে যুক্ত রমার পরিচিতি ও পেশাগত অর্জনও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

ঘোষণার বিস্তারিত

৪ নভেম্বর রাতে নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনে জোহরান মামদানির নির্বাচনী জয়ের পর তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বামী জোহরান তাঁর স্ত্রী রমা দুয়াজিকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। জোহরান বলেন, “আমার অসাধারণ স্ত্রী, রমা, এই মুহূর্তে এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে, আমি তার চেয়ে বেশি আর কাউকে পাশে চাই না।”

নিউইয়র্কে শপথ গ্রহণের পর রমা ২৮ বছরের বয়সে সিটির ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফার্স্ট লেডি হিসেবে পরিচিত হবেন।

রমা দুয়াজির জীবনপটভূমি

রমা দুয়াজি জন্মগ্রহণ করেন টেক্সাসে, যুক্তরাষ্ট্রে। নয় বছর বয়সে পরিবারসহ দুবাই চলে যান। পরে কাতারে কিছুদিন পড়াশোনা করেন। তার বাবা-মা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের মুসলিম বংশোদ্ভূত।

রমা নিউইয়র্কভিত্তিক একজন চিত্রশিল্পী। তিনি ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক এবং নিউইয়র্ক সিটির স্কুল অব ভিজ্যুয়াল আর্টস থেকে ইলাস্ট্রেশনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

তার শিল্পকর্মে মূলত মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি, সামাজিক অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক বিষয়াবলী ফুটে ওঠে। রমার কাজ বিবিসি নিউজ, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, ভাইস এবং লন্ডনের টেট মডার্ন মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়েছে।

শৈল্পিক কর্মকাণ্ড ও সামাজিক সচেতনতা

রমা প্রধানত প্রতিকৃতি ও গতিশীল চিত্রের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব এবং সামষ্টিক অভিজ্ঞতার সূক্ষ্ম দিকগুলো অন্বেষণ করেন। তার বেশিরভাগ কাজ সাদা-কালো রঙে, যেখানে আরব বিশ্বের দৃশ্যাবলী ফুটে ওঠে।

তিনি কিছু কাজের মাধ্যমে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের সমালোচনা, ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের নিন্দা এবং ফিলিস্তিনিদের ‘জাতিগত নিধন’ বিরোধী বক্তব্য প্রকাশ করেছেন। তার কিছু শিল্পকর্মে ফিলিস্তিনপন্থি কর্মী মাহমুদ খালিলের পক্ষেও সমর্থন দেখা যায়, যার কারণে ট্রাম্প প্রশাসন তাকে বহিষ্কারের চেষ্টা করেছিল।

রমা শিল্পের মাধ্যমে রাজনৈতিক এবং সামাজিক সচেতনতা ছড়ানোর বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাসী। তিনি বলেন, “শিল্পের মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা প্রত্যেকের দায়িত্ব।”

রাজনৈতিক পর্দার আড়ালে রমা

নির্বাচন প্রচারণার শুরুতে রমা জনসমক্ষে খুব কম উপস্থিত ছিলেন। প্রতিপক্ষরা অভিযোগ তোলে যে জোহরান তাকে ‘আড়াল’ করছেন। তবে পরবর্তীতে রমা প্রচারণার নকশা, রঙ ও টাইপফেসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

মামদানির একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে প্রকাশিত হয়েছে, “রাজনীতি কতটা নির্মম হতে পারে তা বোঝা যায়, কিন্তু আমার পরিবারকে নিয়ে কথা উঠলে সেটা ভিন্ন। আপনি আমার মতাদর্শের সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু আমার পরিবারকে নয়।”

এই পন্থার কারণে রমার উপস্থিতি সীমিত হলেও, তিনি নেপথ্য চালিকা শক্তি হিসেবে দম্পতির নির্বাচনী প্রচারণায় ভূমিকা রাখেন।

সম্পর্ক ও পরিচয়

রমা দুয়াজি এবং জোহরান মামদানির পরিচয় হয়েছিল ডেটিং অ্যাপ হিঞ্জে। তিন মাস আগে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জোহরান নির্বাচনী জয়ী ভাষণে রমাকে ‘অসাধারণ’ হিসেবে অভিহিত করেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক সাক্ষাৎকারে রমার বন্ধু হাসনাইন ভাট্টি বলেছেন, “তিনি আমাদের সময়ের আধুনিক প্রিন্সেস ডায়ানা।” অন্য বন্ধুদের মতে, রমা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে হলেও এটি কিছুটা ক্লান্তি সৃষ্টি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রমার শিল্পী এবং সামাজিক সচেতনতার ভূমিকা জোহরান মামদানির রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলবে। তিনি ফার্স্ট লেডি হিসেবে নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও প্রচারণার পরিকল্পনায় সহায়তা করবেন।

শিল্প এবং সামাজিক সচেতনতার সংমিশ্রণ ফার্স্ট লেডি হিসেবে তার উপস্থিতিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে।

রমা দুয়াজি শুধু একজন ফার্স্ট লেডি নন, তিনি একজন শিল্পী ও সামাজিক সচেতন নাগরিক। নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে কনিষ্ঠ ফার্স্ট লেডি হিসেবে তার উপস্থিতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তার সৃজনশীলতা ও সামাজিক সচেতনতা নিউইয়র্কের রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দৃশ্যকে সমৃদ্ধ করবে।

এম আর এম – ২১২৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button