মার্কো রুবিওর উপস্থিতিতে অভিবাসীদের ‘নির্বাসন বিমান’ উড্ডয়ন
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সেক্রেটারি মার্কো রুবিও অভিবাসীদের ‘নির্বাসন বিমান’ উড্ডয়ন সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই ঘটনাটি মার্কিন প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কঠোর বাস্তবায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফ্লাইটটি ৩২ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারীসহ মোট ৪৩ জন অভিবাসীকে কলম্বিয়ায় ফেরত নিয়ে যাচ্ছিল, যাদের ড্যারিয়েন গ্যাপ পার হওয়ার পর পানামায় আটকানো হয়েছিল।
রুবিওর সরাসরি এই ধরনের অপারেশন পর্যবেক্ষণ করা একটি বিরল ঘটনা, বিশেষ করে ক্যামেরার সামনে। এটি প্রমাণ করে যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসন নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। পানামা থেকে উড্ডয়নের আগে রুবিও বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে পুরো প্রক্রিয়া নিরীক্ষণ করেন।
রুবিও বলেন, “দ্রুত পরিবর্তনশীল অভিবাসন সংকট আধুনিক যুগের অন্যতম বড় ট্র্যাজেডি। এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিদের নয়, বরং পুরো দেশের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অনেকে পথের মধ্যে শিকার হন, যা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত দুঃখজনক।”
যুক্তরাষ্ট্র-পানামা অভিবাসন সহযোগিতা
রুবিও তার মধ্য আমেরিকা সফরের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে পানামা সিটিতে অভিবাসন ইস্যুতে বিশেষ মনোযোগ দেন। তিনি পানামা ক্যানেল এবং চীনের প্রভাবের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখলেও অভিবাসন ইস্যুই ছিল সফরের প্রধান এজেন্ডা।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে পানামাকে ২.৭ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। এই অর্থের মাধ্যমে ডিপোর্টেশন ফ্লাইট পরিচালনা এবং টিকিটের খরচ বহন করা হয়েছে। পানামার অভিবাসন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ধরনের ৪৪টি ফ্লাইটের মাধ্যমে প্রায় ২০০০ অভিবাসীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
অভিবাসন নীতির কঠোর বাস্তবায়ন
ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন নীতিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এমনকি যেসব দেশ তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের হুমকি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি কলম্বিয়া দুইটি ফ্লাইট গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোয় যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। অন্যদিকে, পানামা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করেছে।
রুবিও বলেন, “এই ধরনের ডিপোর্টেশন ফ্লাইট অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বার্তা দেয়। এটি দেখায় যে যুক্তরাষ্ট্র তার সীমান্তে অবৈধ প্রবেশ রোধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
মধ্য আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল
রুবিওর সফরের অংশ হিসেবে এল সালভাদর, কোস্টারিকা, গুয়াতেমালা এবং ডোমিনিকান রিপাবলিকেও ভ্রমণের পরিকল্পনা রয়েছে। এই সফরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কৌশলগুলো আরও জোরদার করার জন্য স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
রুবিও জানান, “আমরা বুঝতে পারছি যে, আমাদের সীমান্ত কেবল টেক্সাস বা মেক্সিকোতে সীমাবদ্ধ নয়। এটি আরও অনেক দূর থেকে শুরু হয়, যেখানে অভিবাসনের মূল স্রোত গড়ে ওঠে। তাই আমাদের প্রচেষ্টা হবে সেই স্থানগুলোতে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করা।”
ইউএসএআইডি বন্ধের গুজব
রুবিওর বিদেশ সফরের সময়, ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)-এর কর্মীদের প্রধান দফতরে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর কারণ হিসেবে বলা হয় যে, বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক ঘোষণা করেছেন, ট্রাম্প ইউএসএআইডি বন্ধের বিষয়ে তার সঙ্গে সম্মত হয়েছেন। তবে এই বিষয়ে রুবিও কোনো মন্তব্য করেননি।
অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে পানামার ভূমিকা
পানামার প্রেসিডেন্ট জোসে রাউল মুলিনো যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি জানিয়েছেন, ড্যারিয়েন অঞ্চলে একটি বিমানঘাঁটি নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে। তবে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের বিষয়ে জটিলতা রয়ে গেছে, কারণ ভেনেজুয়েলা এই ধরনের ফ্লাইট গ্রহণে অনিচ্ছুক।
রুবিও বলেন, “অবৈধ অভিবাসন বন্ধের এই প্রচেষ্টা কার্যকর হচ্ছে। অভিবাসীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, যা আমাদের শক্তিশালী অংশীদারিত্বের ফলাফল। এই ধরনের সহযোগিতা আমাদের অভিবাসন নীতিকে আরও কার্যকর করতে সাহায্য করবে।”
উপসংহার
মার্কো রুবিওর এই সফর এবং ডিপোর্টেশন ফ্লাইট পর্যবেক্ষণ মার্কিন প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কঠোর বাস্তবায়নের প্রতীক। অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।