যুক্তরাষ্ট্রের ‘থিঙ্ক টোয়াইস অ্যাক্ট-২০২৫’ অনুযায়ী চীন থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করলে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘটনার বিবরণ
বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী চীনের কাছ থেকে ২০টি জে-১০ যুদ্ধবিমান, সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল এবং দূরপাল্লার রাডার সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপকে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘থিঙ্ক টোয়াইস অ্যাক্ট-২০২৫’ নামে নতুন আইন অনুযায়ী, চীন থেকে সমরাস্ত্র কিনলে সংশ্লিষ্ট দেশ নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
ঢাকায় মনোনীত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন সম্প্রতি সিনেটে শুনানিতে এ ধরনের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির মাধ্যমে তারা বিভিন্ন দেশের ওপর কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছে।
মার্কিন থিঙ্ক টোয়াইস অ্যাক্ট-২০২৫-এর লক্ষ্য হলো চীনের সামরিক প্রভাব সীমিত করা এবং ছোট দেশগুলোকে চীনা অস্ত্র সংগ্রহ থেকে নিরুৎসাহিত করা। এই আইন ১১০তম কংগ্রেসে উত্থাপিত হয়েছে এবং ২৩ জুলাই প্রথম অধিবেশনে প্রস্তাবিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি অনুযায়ী, চীনের অস্ত্র বাণিজ্য শুধু সামরিক প্রভাব বিস্তার নয়, বরং বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করছে। এর ফলে মার্কিন ঐতিহ্যগত অংশীদারদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ও কার্যক্রম
যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি অনুযায়ী, চীনের সমরাস্ত্র বিক্রি তাদের কৌশলগত প্রভাব বিস্তারে সহায়ক। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
- বিভিন্ন দেশের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা
- চীনের কৌশলগত ও কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি
- নির্দিষ্ট অঞ্চলে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ নিশ্চিত করা
- সমরাস্ত্রের মান ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করে ভবিষ্যতের সামরিক প্রস্তুতি বৃদ্ধি করা
এই কারণে যুক্তরাষ্ট্র চীনা অস্ত্রের সম্ভাব্য ক্রেতাদের সতর্ক করছে এবং তাদেরকে মার্কিন আইন সম্পর্কে জানাচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রযুক্তিগত দিক থেকে চীন অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে। বিশেষ করে বিরল ধাতু ব্যবহার করে অত্যাধুনিক অস্ত্র উৎপাদনে চীনকে অগ্রণী মনে করা হয়। তবে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অব্যাহত রাখছে এবং স্বাধীন ও আত্মনির্ভর পররাষ্ট্রনীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীন ও আত্মনির্ভর নীতি অনুসরণ চীনের পক্ষ থেকে প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের সরকার কোনো বিদেশি শক্তির নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে না এবং চীন এই নীতি সমর্থন করে।
বিশ্লেষক মতামত
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, থিঙ্ক টোয়াইস অ্যাক্ট-২০২৫ একটি বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা আইন হিসেবে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। পারভেজ করিম আব্বাসী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সেক্রেটারি অব স্টেট ও সেক্রেটারি অব ডিফেন্সকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দিয়েছে, যাতে চীনের অস্ত্র বিক্রির প্রভাব এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আইনটি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতি ও চীনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রভাব
চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বাড়ানোর ফলে বাংলাদেশ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য ঝুঁকির মুখোমুখি হতে পারে। তবে বাংলাদেশ সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বও শক্ত করা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশকে এমন কৌশল নিতে হবে যাতে দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ে, কিন্তু কোনো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বা অর্থনৈতিক ঝুঁকি সৃষ্টি না হয়।
চীন থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহের পরিকল্পনা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আইন ‘থিঙ্ক টোয়াইস অ্যাক্ট-২০২৫’ দেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সামরিক ও কূটনৈতিক সঙ্গতি বজায় রাখা বাংলাদেশের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ।
এম আর এম – ২১১২,Signalbd.com



