বিশ্ব

টাইফুন কালমায়েগির তাণ্ডবে ফিলিপিন্সে মৃত্যু বেড়ে ৯৩

Advertisement

ফিলিপিন্সের মধ্যাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় কালমায়েগির আঘাতে অন্তত ৯৩ জনের মৃত্যু, আরও ২৬ জন নিখোঁজ। প্রদেশগুলোতে ব্যাপক বন্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চলছে।

টাইফুনের আঘাত ও মৃত্যুর বিস্তারিত

ফিলিপিন্সের মধ্যাঞ্চলে সোমবার (৩ নভেম্বর) মধ্যরাতে আঘাত হানে টাইফুন কালমায়েগি। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে এটি সেবু ও নেগরোস দ্বীপ অতিক্রম করে। শক্তিশালী ঝড় ও প্রবল বৃষ্টিপাতে সেবু প্রদেশের বিভিন্ন এলাকা তাণ্ডবের মুখে পড়ে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানান, ঝড়ের সময় বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছেছিল। এর ফলে গাছপালা উপড়ে পড়েছে, বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং নদী ও নালা পাড়ি দেওয়া মানুষদের জন্য মারাত্মক বিপদ সৃষ্টি করেছে।

সেবু সিটির মেট্রোপলিটন এলাকা লিলোয়ান শহর থেকে ৩৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য প্রদেশগুলোতে আরও ১৭ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩ জন। এছাড়া ২৬ জন এখনও নিখোঁজ।

ভয়াবহ বন্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ

প্রাদেশিক গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো বন্যাকে ‘অভূতপূর্ব’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “প্রবল বাতাসের চেয়ে পানি মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহু মানুষ ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। রাস্তায় গাড়ি ভাসতে দেখা গেছে, ঘরবাড়ি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঝড়ের কারণে কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম

ফিলিপাইনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, টাইফুন পরবর্তী ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করতে গিয়ে একটি সুপার হিউই হেলিকপ্টার উত্তর মিন্দানাও দ্বীপে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে।

ত্রাণ কার্যক্রমে নিয়োজিত অন্যান্য হেলিকপ্টার এবং উদ্ধারকর্মীরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জোরদার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে অব্যাহত রয়েছে।

পূর্বপ্রসঙ্গ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়

ফিলিপিন্স প্রায় নিয়মিত টাইফুনের মুখোমুখি হয়, তবে কালমায়েগি আঘাত তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামুদ্রিক তাপমাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে।

উষ্ণ মহাসাগরের পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়, যা ঘূর্ণিঝড়কে শক্তিশালী করে তোলে। এর সঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতও যুক্ত হওয়ায় বন্যার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

সেবু সিটির বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই ধরনের ভয়াবহ বন্যা তারা আগে কখনও দেখেননি। স্থানীয় দূর্যোগ কর্মকর্তারা উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন। পানিবন্দি মানুষদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এক ২৮ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “ঝড়ের সময় আমরা ভবনের ওপরের তলায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। পানি খুব দ্রুত বাড়তে শুরু করেছিল এবং আমরা বাইরে বের হতে পারিনি।”

পরিসংখ্যান ও ক্ষয়ক্ষতি

সেবু প্রদেশের উপকূলীয় শহরগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কালমায়েগির আঘাতে বিভিন্ন প্রদেশে বৈদ্যুতিক লাইন, সড়ক এবং বাড়িঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা (NDRRMC) জানিয়েছে, প্রায় ৪ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

বৈজ্ঞানিকরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে টাইফুন এবং ঘূর্ণিঝড় ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। মানবসৃষ্ট কারণ ও উষ্ণ মহাসাগরের কারণে ঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ফিলিপাইনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা বলছেন, জরুরি প্রস্তুতি, আগাম সতর্কতা, এবং দ্রুত উদ্ধার ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ। না হলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

টাইফুন কালমায়েগি ফিলিপিন্সে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং মৃত্যুর কারণ হয়েছে। প্রচণ্ড বাতাস, ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যা স্থানীয়দের জীবন ও সম্পদ বিপন্ন করেছে। ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও, ভুক্তভোগীদের জন্য পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত সংকটজনক। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি জরুরি।

এম আর এম – ২১০৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button