মালয়েশিয়ায় এক তরুণীর আঙুল চেয়ারের ছোট একটি ছিদ্রে আটকে যাওয়ার পর ঘটে অদ্ভুত এক ঘটনা। প্রথমে পরিবারের সদস্যরা নানা উপায়ে আঙুল বের করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে শেষ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার করে ওই তরুণীকে উদ্ধার করেন। পুরো ঘটনাটি ভিডিওতে ধারণ করা হয় এবং দ্রুতই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, ঘটনাটি মালয়েশিয়ার এক আবাসিক এলাকায় সম্প্রতি ঘটে। ওই তরুণী একটি প্লাস্টিকের চেয়ার টেনে বসতে গেলে হঠাৎ তার ডান হাতের একটি আঙুল চেয়ারের ছোট ছিদ্রে ঢুকে যায় এবং সেখানেই আটকে পড়ে।
প্রথমে তিনি নিজে চেষ্টা করে আঙুল বের করতে না পেরে পরিবারের সদস্যদের ডাকেন। কয়েকজন মিলে সাবান, তেল, এমনকি ঠান্ডা পানি ব্যবহার করেও আঙুল মুক্ত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়নি। বরং আঙুল ফুলে যায় এবং ব্যথা বাড়তে থাকে।
পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়লে তারা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিশেষ ধাতব কাটার যন্ত্র ব্যবহার করে সতর্কতার সঙ্গে চেয়ারের অংশ কেটে তরুণীর আঙুল বের করেন।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জানান, “আমরা খুব সাবধানতার সঙ্গে কাজটি করেছি, কারণ সামান্য ভুলেও আহত হওয়ার আশঙ্কা ছিল।”
উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা
ফায়ার সার্ভিসের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টার পর আঙুলটি নিরাপদে মুক্ত করতে সক্ষম হয়। উদ্ধার অভিযানের পুরো প্রক্রিয়া মোবাইল ফোনে ধারণ করেন উপস্থিত এক প্রতিবেশী। পরবর্তীতে ভিডিওটি অনলাইনে আপলোড হওয়ার পর মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য চেয়ারের নিচের অংশ কেটে নিচ্ছেন, আরেকজন তরুণীর হাত ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখছেন। পাশে পরিবারের সদস্যরা উদ্বেগভরা চোখে উদ্ধার অভিযান পর্যবেক্ষণ করছেন।
অবশেষে সফলভাবে আঙুল বের হওয়ার পর তরুণী স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন, আর আশপাশের মানুষ তালি দিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন।
এমন অদ্ভুত ঘটনা নতুন নয়
এ ধরনের অস্বাভাবিক দুর্ঘটনা নতুন কিছু নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর আগেও চেয়ারের ছিদ্রে বা অদ্ভুত জায়গায় আঙুল আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিক বা লোহার চেয়ারে থাকা ছোট ছিদ্র বা ডিজাইন ফাঁক সাধারণত শিশু বা বয়স্কদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অনেক সময় আঙুলের চামড়া ভেতরে টেনে নিয়ে ফুলে যাওয়ার কারণে ফাঁদে আটকে পড়ে এবং তা নিজে থেকে বের করা সম্ভব হয় না।
চিকিৎসকরা বলেন, এ ধরনের ঘটনায় জোর করে টানাটানি করা উচিত নয়, কারণ এতে হাড় ও টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বরং বরফ, তেল বা সাবান ব্যবহার করে কিছু সময় পর চেষ্টা করা উচিত। তাও কাজ না হলে বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল প্রতিক্রিয়া
ঘটনার ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে হাস্যরসাত্মক মন্তব্য করেন, আবার কেউ সতর্ক করেন এমন আসবাব ব্যবহারে সাবধান হতে।
একজন মন্তব্য করেন, “এই ভিডিও দেখে আমি এখন আর কোনো প্লাস্টিকের চেয়ারে হাত দেই না।” আরেকজন লেখেন, “ফায়ার সার্ভিসের ধৈর্য্য ও দক্ষতা প্রশংসনীয়, তারা আসলেই নায়ক।”
তবে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষণীয় বার্তা দিয়েছেন। তাদের মতে, “এটি ছোট ঘটনা মনে হলেও, মুহূর্তেই বড় বিপদের কারণ হতে পারে। তাই ঘরে ব্যবহৃত আসবাবপত্রে নিরাপত্তার দিকে আরও নজর দেওয়া প্রয়োজন।”
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সতর্কতা
গৃহস্থালি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সময় অপ্রত্যাশিতভাবে এমন দুর্ঘটনা ঘটে যায়, যা এড়ানো সম্ভব যদি সামান্য সতর্কতা নেওয়া হয়।
তাদের মতে, শিশু বা তরুণদের ক্ষেত্রে চেয়ারের ছিদ্র, টেবিলের গর্ত বা লোহার ফাঁক নিয়ে খেলার অভ্যাস খুব ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে প্লাস্টিক চেয়ারের ছোট গোল ছিদ্রগুলো আঙুল আটকে যাওয়ার ঝুঁকি বহন করে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, “আসবাব কেনার সময় নকশা ও ফিনিশিং ভালোভাবে দেখা উচিত। কোনো ধারালো বা ছোট ফাঁক থাকলে তা ব্যবহার না করাই উত্তম।”
তরুণীর শারীরিক অবস্থা ও পরবর্তী পরিস্থিতি
উদ্ধারের পর তরুণীকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার আঙুলে সামান্য ফোলাভাব থাকলেও বড় ধরনের আঘাতের আশঙ্কা নেই। একদিনের বিশ্রামের পর তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবেন।
পরিবারের সদস্যরা ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, “ওরা না এলে হয়তো আঙুলের অবস্থা আরও খারাপ হতো।”
এই ঘটনাটি ছোট হলেও বড় এক শিক্ষা রেখে গেছে। গৃহস্থালি জীবনের নিরাপত্তা অনেক সময় আমাদের অবহেলায় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক মুহূর্তের অসাবধানতা থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
তাই বিশেষজ্ঞরা সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছেন— ঘরে ব্যবহৃত আসবাব বা যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সচেতন থাকুন, যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ এড়ানো যায়।
এম আর এম – ২০৮৫,Signalbd.com



