তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বৃহস্পতিবার জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্ৎসকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন তুলেছেন, গাজায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক গণহত্যা, দুর্ভিক্ষ ও হামলা জার্মানি কি দেখছে না। আঙ্কারায় অনুষ্ঠিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি জোর দিয়ে বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা এখন নৈতিক দায়িত্ব।
ঘটনার বিস্তারিত
এরদোয়ান আঙ্কারার প্রেসিডেন্ট অফিসে চ্যান্সেলর মের্ৎসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গাজায় হামাসের কাছে কোনো ধরণের পারমাণবিক বা আধুনিক অস্ত্র নেই, কিন্তু ইসরাইলের হাতে রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ইসরাইল হামলার মাধ্যমে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা প্রয়োগ করছে।
তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ইসরাইল আবারও হামলা চালাচ্ছে। জার্মানি কি এসব দেখতে পাচ্ছে না?” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তুর্কি প্রেসিডেন্ট জার্মানিকে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
গাজা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট
ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চলমান উত্তেজনা চলতি মাসে তীব্র রূপ নিয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) থেকে ইসরাইল ভয়াবহ হামলা চালানো শুরু করে, যার ফলে গাজায় ৪৬ শিশুসহ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর আগে সেপ্টেম্বর থেকে চলা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হয়েছে বারবার।
এই হামলার ফলে গাজা উপত্যকা মানবিক সংকটে পতিত হয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি, চিকিৎসা ও খাদ্য সরবরাহ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছে।
তুরস্ক-জার্মান সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা
এরদোয়ান বলেছেন, গাজায় পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে এবং নতুন হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে তুরস্ক ও জার্মানির যৌথ উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উল্লেখ করেন, দুই দেশের যৌথ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট মানবিক সংস্থাগুলোকে অবিলম্বে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। বিশেষ করে জার্মান রেডক্রস ও তুরস্কের রেড ক্রিসেন্টকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান ইউরোপে বর্ধমান বর্ণবাদ, বিদেশীবিদ্বেষ এবং ইসলামবিদ্বেষ মোকাবিলার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এসব ঘৃণার প্রবণতা বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।
জার্মান চ্যান্সেলর মের্ৎস বলেন, জার্মানি তুরস্কের সঙ্গে নিরাপত্তা নীতি ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা চালিয়ে যাবে। তিনি তুরস্ককে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে অভিহিত করেন।
পূর্বপ্রসঙ্গ ও ইতিহাস
গাজায় ইসরাইল-হামাস সংঘাত দীর্ঘদিন ধরে চলমান। অতীতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সাম্প্রতিক হামলাগুলোতে বেসামরিক লোকজনের ওপর ধ্বংসাত্মক আক্রমণ এবং শিশুদের মৃত্যু আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
এরদোয়ানের মন্তব্য আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে, কারণ তিনি সরাসরি একটি প্রভাবশালী ইউরোপীয় নেতাকে প্রশ্ন করেছেন।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এরদোয়ানের প্রশ্ন জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তুরস্ক চেষ্টা করছে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা জোরদার করতে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের কূটনৈতিক উদ্যোগ গাজার অবস্থা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে, তবে জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ইসরাইল-হামাস সংঘাতের ইতিহাস সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।
গাজায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলা এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্টের তীব্র নিন্দা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জার্মান চ্যান্সেলর ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক নেতাদের ভূমিকা গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও গাজায় মানবিক সহায়তার দ্রুত প্রয়োগের ওপর।
এম আর এম – ২০২১,Signalbd.com



