ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, গাজায় ইসরাইলের আরও অনেক কিছু করার আছে। নেতানিয়াহু বলেন, হামাস যদি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করতে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ঘোষণা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে এক সরকারি অনুষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে।
নেতানিয়াহুর বিবৃতি
নেতানিয়াহু বলেছেন, “দিনশেষে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করা হবে এবং গাজাকে বেসামরিকীকরণ করা হবে। যদি আন্তর্জাতিক শক্তি এই কাজটি করতে পারে, তা ভালো হবে, আর যদি না পারে, আমরা করব।” তিনি আরও জানান, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত এবং প্রয়োজন হলে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নেতানিয়াহুর মতে, গত দুই দিনে ইসরায়েল হামাসের অবস্থান লক্ষ্য করে শক্তিশালী হামলা চালিয়েছে। তিনি বলছেন, হামাস যদি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে, তখন প্রতিক্রিয়া অবিলম্বে হবে।
গাজায় হামলার প্রেক্ষাপট
গাজায় ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযান ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়। তখন হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে প্রায় ১২০০ মানুষকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এরপর থেকে গাজায় পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে। দুই বছরের এই সংঘর্ষে ৬৮,৫০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
গত ৯ অক্টোবর মিসরের শারম আল-শেখে যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েল আবারও গাজায় হামলা চালাচ্ছে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কারণে হামাসও কিছু জিম্মি মরদেহ হস্তান্তর স্থগিত করেছে।
মানবিক প্রভাব
এই হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০৯ জনে দাঁড়িয়েছে, যাদের মধ্যে ৪৬ শিশু রয়েছে। হামলার ফলে গাজার হাসপাতালগুলো পুনরায় আহতদের ভর্তি করছে এবং উপত্যকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কাতার, ইরান এবং জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজার এই মানবিক সংকট শুধু স্থানীয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক শান্তি প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করতে পারে। শিশু ও অসহায় নাগরিকদের জীবন হুমকির মধ্যে রয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের বিষয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইরানও এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী হামলার ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও মধ্যস্থতায় অবদান রেখেছিলেন এবং ৯ অক্টোবর গাজার যুদ্ধবিরতি স্থির করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে, সাম্প্রতিক এই লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক শান্তি প্রচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জ করছে।
বিশ্লেষণ
নেতানিয়াহুর এই ঘোষণার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে ইসরায়েল হামাসের ওপর শক্তিশালী চাপ চালাতে চলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করবে। এছাড়া, গাজার মানবিক সংকট আরও গভীর হতে পারে, যা বিশ্বমঞ্চে ইসরায়েলের অবস্থানকে প্রভাবিত করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের এই ঘটনা ভবিষ্যতে গাজার স্থিতিশীলতা এবং মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়াকে কঠিন করবে। একই সঙ্গে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতা ও তত্ত্বাবধানে মানবিক সহায়তা আরও জরুরি হয়ে উঠেছে।
সামরিক ও কূটনৈতিক দিক
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যেই গাজার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছে এবং তাদের হামলার পরিকল্পনা প্রায় সম্পন্ন। নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, প্রয়োজন হলে তারা যেকোনো সময় হামলা চালাতে সক্ষম। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সামরিক হুমকির পাশাপাশি কূটনৈতিক চাপে আসল প্রভাব গাজার সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে। এই অবস্থায়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মানবিক সহায়তা এবং রাজনৈতিক মধ্যস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ও নেতানিয়াহুর ঘোষণার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ফলে মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও রাজনৈতিক চাপের ওপর নির্ভর করবে।
এম আর এম – ২০১৯,Signalbd.com



