বিশ্ব

আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে মালয়েশিয়ার পথে ট্রাম্প

Advertisement

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে ৫ দিনের সফরের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এই সফরকে ওয়াশিংটন ও কুয়ালালামপুর উভয় দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ এক কূটনৈতিক মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি ও ভূরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

আসিয়ান সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি কেন গুরুত্বপূর্ণ

এবারের আসিয়ান (ASEAN) সম্মেলনের আয়োজক দেশ মালয়েশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের এই সফর অনেক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ মালয়েশিয়া সফর মার্কিন প্রেসিডেন্টদের জন্য বিরল ঘটনা—এর আগে মাত্র দুইজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, লিন্ডন বি. জনসন ও বারাক ওবামা, দেশটি সফর করেছিলেন।

রোববার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের এই আসিয়ান সম্মেলনে সদস্যভুক্ত দেশগুলোর পাশাপাশি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিলসহ একাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতারাও উপস্থিত থাকবেন। এ সম্মেলনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক সহযোগিতা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও জলবায়ু নীতিনির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হবে।

বাণিজ্য টানাপড়েনের মধ্যেই ট্রাম্পের সফর

ট্রাম্পের এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তার দ্বিতীয় মেয়াদের শুরু থেকেই ট্রাম্প চীনা পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা এশিয়ার বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে।

ট্রাম্পের সফরের আগের দিনই কুয়ালালামপুরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অর্থনৈতিক কর্মকর্তাদের বৈঠক শুরু হয়। সেখানে শুল্কনীতি, দুর্লভ খনিজ পদার্থ রপ্তানিতে চীনের সীমাবদ্ধতা এবং প্রযুক্তি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই আলোচনাগুলোর ফলাফল ট্রাম্প-শি বৈঠকের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে, যা আগামী বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে হওয়ার কথা।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ট্রাম্পের কূটনৈতিক ভারসাম্য

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে ট্রাম্পের এই সফরকে অনেকেই কূটনৈতিক ভারসাম্যের উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। মালয়েশিয়া বহু বছর ধরেই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝেও নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে।

আনোয়ার ইব্রাহিম সম্প্রতি বলেছেন, “মালয়েশিয়া সব সময় শান্তিপূর্ণ ও পারস্পরিক স্বার্থভিত্তিক সহযোগিতার পক্ষে।” তার এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, মালয়েশিয়া এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এক ধরণের ‘ব্যালেন্সিং পলিসি’ অনুসরণ করছে। ট্রাম্পের সফর এই অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে বলে কূটনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে।

আসিয়ান সম্মেলনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু: নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও জলবায়ু

এ বছরের আসিয়ান সম্মেলনে তিনটি বড় ইস্যু প্রধান আলোচ্য হিসেবে উঠে আসছে—
১. দক্ষিণ চীন সাগরে নিরাপত্তা ও নৌ চলাচল নিশ্চিতকরণ,
২. যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য বিরোধের প্রভাব,
৩. জলবায়ু পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যৌথ উদ্যোগ।

আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা ও সবুজ অর্থনীতিতে সহযোগিতা বাড়াতে চায়। ট্রাম্প প্রশাসনও এই অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে হোয়াইট হাউস।

ট্রাম্প-আনোয়ার বৈঠক ও আঞ্চলিক প্রত্যাশা

রোববার কুয়ালালামপুরে ট্রাম্প ও আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যে একান্ত বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

মালয়েশিয়ার কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, এ বৈঠকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা ও দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কার্যকলাপ নিয়েও ট্রাম্প মতবিনিময় করবেন।

এছাড়া সম্মেলনের ফাঁকে ট্রাম্পের ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে। এসব বৈঠক এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নতুন জোটবদ্ধতার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

“কৌশলগত পুনরাগমন”

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই সফর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক ধরণের “কৌশলগত পুনরাগমন” নির্দেশ করে। দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে এবার ট্রাম্প প্রশাসন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এশিয়া অঞ্চলে।

ওয়াশিংটনের ফরেন পলিসি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক মার্ক অ্যান্ডারসন বলেন, “ট্রাম্প আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নিয়ে আসলে একটি বার্তা দিতে চাচ্ছেন—আমেরিকা এখনো এই অঞ্চলে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।”

ট্রাম্পের মালয়েশিয়া সফর নিঃসন্দেহে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কূটনৈতিক কৌশলের ইঙ্গিত বহন করছে। এই সফরের ফলাফল শুধু যুক্তরাষ্ট্র-মালয়েশিয়া সম্পর্কেই নয়, বরং পুরো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, আসিয়ান সম্মেলনে ট্রাম্পের অবস্থান ও বক্তব্য পরবর্তী সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হবে। এখন দেখার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্র কতটা সফলভাবে এই সফরের মাধ্যমে নিজের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারে।

এম আর এম – ১৯২৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button