বাংলাদেশ

আ’লীগের স্লোগান দিচ্ছে বিএনপি: মুফতী ফয়জুল করীম

Advertisement

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনায় এসেছে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান ও স্লোগান পরিবর্তন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী ফয়জুল করীম যশোরে এক জনসভায় বলেন—“বিএনপি আজ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ভুলে গিয়ে আওয়ামী লীগের স্লোগানকে আঁকড়ে ধরছে।” তার মতে, এটি দলটির রাজনৈতিক দুর্বলতা ও আদর্শচ্যুতির প্রমাণ।

এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে আবারও সামনে চলে এসেছে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আদর্শভিত্তিক টানাপোড়েন, এবং সেখানে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান।

ফয়জুল করীমের বক্তব্যের সারাংশ

যশোরে আয়োজিত এক জনসভায় মুফতী ফয়জুল করীম বলেন—

  • বিএনপি আজ পথ হারিয়েছে। তারা প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের দেখানো পথে না থেকে আওয়ামী লীগের স্লোগান “তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি” ব্যবহার করছে।
  • তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল এখন নিজেরাই নিজেদের মধ্যে খুনাখুনিতে লিপ্ত হয়েছে।
  • দেশব্যাপী চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে বিএনপির কর্মীরা।
  • এ কারণে দেশের সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
  • তার মতে, বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন ক্ষমতায় এলে এই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ বনাম বাঙালি জাতীয়তাবাদ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদের প্রশ্ন সবসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।

  • আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাজনীতি পরিচালনা করে আসছে। তাদের মূল স্লোগান ছিল: “তুমি কে, আমি কে, বাঙালি বাঙালি”
  • অন্যদিকে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে ১৯৭৮ সালে জন্ম নেয়। তিনি ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়কে তুলে ধরা হয়।

মুফতী ফয়জুল করীমের দাবি অনুযায়ী, বিএনপি এখন সেই মূল দর্শন ভুলে আওয়ামী লীগের জাতীয়তাবাদকেই গ্রহণ করছে।

বিএনপির অতীত শাসন ও বিতর্ক

ফয়জুল করীম তার বক্তৃতায় স্মরণ করিয়ে দেন যে—

  • প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা করেছিলেন।
  • পরে তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ক্ষমতায় আসেন।
  • কিন্তু ক্ষমতায় এসে তারা “বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ” প্রতিষ্ঠা না করে বরং দুর্নীতির চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠেন।

আন্তর্জাতিক স্বচ্ছতা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-এর প্রতিবেদনে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এই সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, যা আজও রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে।

অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ ও জনআস্থা হারানো

মুফতী ফয়জুল করীম অভিযোগ করেন—

  • বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল আজ নিজেদের ভেতর দ্বন্দ্বে লিপ্ত।
  • রাজপথে আন্দোলন না করে নিজেদের মধ্যে খুনাখুনি করছে।
  • এ কারণে দলটির জনগণের আস্থা হারিয়েছে

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত কয়েক বছরে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সাংগঠনিক দুর্বলতা অনেকটাই বেড়ে গেছে। আন্দোলনে ধারাবাহিক ব্যর্থতা এবং নির্বাচন বর্জনের কারণে তারা মাঠে কর্মী ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।

ইসলামী আন্দোলনের বিকল্প বার্তা

নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে মুফতী ফয়জুল করীম বলেন—

  • বাংলাদেশে মানুষ আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
  • খুন, গুম, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি—সব ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।
  • ইসলামী দল ক্ষমতায় গেলে জনগণ এই অন্যায়ের শিকার হবে না।
  • কেউ না খেয়ে থাকবে না, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

তার মতে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার কারণে জনগণ এখন বিকল্প খুঁজছে, আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশই সেই বিকল্প শক্তি।

দক্ষিণাঞ্চলে বিএনপির ভরাডুবি

মুফতী ফয়জুল করীম আরও বলেন—

  • দক্ষিণাঞ্চল বরাবরই বিএনপির ভোটব্যাংক ছিল।
  • কিন্তু আজ সেই ভোটাররা আর তাদের পাশে নেই।
  • দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জীবনভর বিএনপিকে ভোট দিয়েছে, অথচ দলটি তাদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারেনি।
  • বরং জিয়াউর রহমানের আদর্শের কথা বলে জনগণকে ধোঁকা দিয়েছে

এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চান, বিএনপি এখন তাদের ঐতিহ্যগত ভোটব্যাংক থেকেও আস্থা হারাচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে—

  1. বিএনপির আদর্শগত সংকট: তারা একদিকে জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদকে তুলে ধরতে চায়, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের জাতীয়তাবাদী স্লোগান ব্যবহার করছে। এতে তাদের পরিচয় অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
  2. আন্দোলনে ব্যর্থতা: বারবার আন্দোলনে নামলেও সফলতা না পাওয়ায় কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।
  3. নতুন রাজনৈতিক বিকল্প: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দল নিজেদেরকে বিকল্প শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

যশোরের জনসভায় উপস্থিত সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকে ইসলামী আন্দোলনের বক্তব্যকে সমর্থন করেন, আবার অনেকে মনে করেন—বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ছাড়া বিকল্প শক্তি গড়ে ওঠা এখনো কঠিন।

মুফতী ফয়জুল করীমের বক্তব্য আবারও প্রমাণ করে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আদর্শ ও পরিচয়ের প্রশ্ন এখনো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি আদর্শিক অবস্থান হারিয়ে ফেলেছে কিনা—তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও একথা নিশ্চিত যে, জনগণের আস্থা ফিরে পেতে হলে দলটিকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।

অন্যদিকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ছোট দলগুলো বিকল্প শক্তি হয়ে উঠতে চাইছে, তবে সময়ই বলে দেবে তারা কতটা সফল হবে।

MAH – 12770,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button