জাতীয়

পুলিশের ৬২ কর্মকর্তার পদোন্নতি ও একযোগে পদায়ন

Advertisement

বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদমর্যাদার ৬২ জন কর্মকর্তাকে একযোগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি) পদে পদোন্নতি ও পদায়ন দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

এ পদোন্নতি ও পদায়নের মাধ্যমে শুধু কর্মকর্তাদের ক্যারিয়ারই সমৃদ্ধ হলো না, বরং পুলিশের সামগ্রিক প্রশাসনিক কাঠামোতেও নতুন গতি সঞ্চার হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন

৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখার উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৬২ জন সহকারী পুলিশ সুপারকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে উন্নীত করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশ সদর দপ্তরের পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-১ শাখা থেকে জারি করা আরেকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন ইউনিটে পদায়ন করা হয়।

কারা পেলেন পদোন্নতি?

পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) এর ৩৪তম, ৩৫তম এবং ৩৬তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এছাড়াও রয়েছেন বিভাগীয় পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও।

এই পদোন্নতি শুধু ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মাঠপর্যায়ে অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক দক্ষদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কেন এই পদোন্নতি গুরুত্বপূর্ণ?

বাংলাদেশ পুলিশের কর্মক্ষেত্র দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। জনসংখ্যার চাপ, প্রযুক্তি-ভিত্তিক অপরাধ, সাইবার নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমন এবং মাদক বিরোধী অভিযানে দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ মর্যাদা হলো জেলা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ। জেলা পুলিশ সুপারের সহকারী হিসেবে এই কর্মকর্তারা কাজ করেন। এ পদে অভিজ্ঞ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের নিয়োগ মানে প্রশাসনিক কার্যক্রম হবে আরও গতিশীল।

বাংলাদেশ পুলিশের পদোন্নতি প্রক্রিয়া

পুলিশে পদোন্নতি সাধারণত দুটি উপায়ে হয়ে থাকে—

  1. বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডার অফিসাররা নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে মূল্যায়ন, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পদোন্নতি পান।
  2. বিভাগীয় পদোন্নতি, যেখানে দীর্ঘ সময় ধরে সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কর্মরত কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উচ্চ পদে উন্নীত করা হয়।

এ প্রক্রিয়ায় কর্মকর্তাদের কাজের মান, আচরণ, প্রশাসনিক দক্ষতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অবদান এবং প্রশিক্ষণকে বিবেচনায় নেওয়া হয়।

পুলিশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন ও পদোন্নতির ধারা

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ পুলিশে বেশ কয়েক দফায় পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালে প্রায় ৮০ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে উন্নীত করা হয়েছিল। এছাড়া মাঠপর্যায়ে কর্মরত কনস্টেবল থেকে শুরু করে পরিদর্শক পর্যায়ের পদেও একাধিক ধাপে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রামে ১০৬ জন কনস্টেবলকে কোনো প্রকার তদবির ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ছাত্র আন্দোলনে আহত প্রায় ১০০ জনকে পুলিশে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ পুলিশ এখন যোগ্যতা, মেধা ও অবদানের ভিত্তিতেই কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করছে।

পদোন্নতির ফলে মাঠপর্যায়ের কাজের পরিবর্তন

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের প্রধান দায়িত্ব হলো:

  • জেলা ও রেঞ্জ পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা
  • অপরাধ দমন অভিযান তদারকি
  • জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
  • নির্বাচন, সামাজিক আন্দোলন বা বিশেষ ইভেন্টে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা
  • প্রযুক্তি ও আধুনিক তদন্ত পদ্ধতি ব্যবহার করে অপরাধ উদ্ঘাটন

এই পদোন্নতির ফলে মাঠপর্যায়ের দায়িত্ব বণ্টন আরও সুসংগঠিত হবে।

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একসঙ্গে ৬২ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। এটি তরুণ কর্মকর্তাদের অনুপ্রাণিত করবে এবং দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত অভিজ্ঞদের অবদানকেও স্বীকৃতি দেবে।

তারা বলছেন, “বাংলাদেশ পুলিশ এখন আর শুধু ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধ নয়। সাইবার ক্রাইম, আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্র ও সন্ত্রাস দমনে নতুন প্রজন্মের কর্মকর্তাদের দক্ষতা অত্যন্ত প্রয়োজন। এই পদোন্নতি সেই প্রয়োজন পূরণে সহায়ক হবে।”

পুলিশের ভাবমূর্তি ও জনআস্থা

সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কিছুটা বাড়ছে। স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কঠোর তদারকি এর অন্যতম কারণ। পদোন্নতির মতো উদ্যোগ কর্মকর্তাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে এবং দায়িত্ব পালনে আরও দায়িত্বশীল করে তুলবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সরকারের ভিশন অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্য রয়েছে। এই লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আধুনিকায়ন ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কাজ চলছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পর্যায়ে তরুণ ও মেধাবী কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তি ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

পুলিশের ৬২ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি ও একযোগে পদায়ন বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এতে যেমন কর্মকর্তাদের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে, তেমনি জনগণের নিরাপত্তা ও ন্যায্য সেবার মানও উন্নত হবে।

বাংলাদেশ পুলিশের ক্রমাগত উন্নয়ন প্রমাণ করে, এ বাহিনী কেবল দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাই নয়, বরং আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম চালিকাশক্তি।

MAH – 12833  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button